Top Newsজাতীয়

বড় সংস্কার করতে হবে নির্বাচিত সরকারকে

মোহনা অনলাইন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যা মূলত নির্বাচিত সরকারের ওপর নির্ভর করবে। গত জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে, যার একটি ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত এ কমিশন ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনটি মোট ১৭টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক আচরণ সংস্কার, নাগরিক পরিষেবা উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পুনর্গঠন, সিভিল সার্ভিস সংস্কার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নারীবান্ধব প্রশাসন ইত্যাদি। কমিশন প্রায় ২০০টি সুপারিশ করেছে, যেগুলো বাস্তবায়নের সুবিধার্থে স্বল্পমেয়াদি (ছয় মাসে), মধ্যমেয়াদি (এক থেকে দুই বছরে) এবং দীর্ঘমেয়াদি— এই তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে— দেশের চারটি পুরোনো বিভাগ (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) নিয়ে চারটি প্রদেশ গঠন এবং রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে একটি ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ প্রতিষ্ঠা। এতে দিল্লি মডেলে রাজধানী অঞ্চলে নির্বাচিত আইনসভা ও প্রশাসন থাকবে। প্রস্তাবিত ‘ক্যাপিটাল সিটি’র আওতায় থাকবে ঢাকা, টঙ্গি, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামো পর্যাপ্ত নয়। সেবা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করা হলে ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীভবন কমবে এবং রাজধানীর ওপর চাপও হ্রাস পাবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর মনে করেন, এসব সংস্কার দীর্ঘমেয়াদি হলেও মৌলিক সংস্কারগুলো ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব, যদি বর্তমান সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, তারা সময়ভিত্তিক সুপারিশ করেছেন, যাতে বাস্তবায়ন সহজ হয় এবং ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠিত হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন— নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন। পরবর্তী নভেম্বর মাসে গঠিত হয় আরও পাঁচটি— স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রম অধিকার, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button