বরেণ্য সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ (১০ মে) ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তার মেয়ে শারমিন আব্বাসী গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তবে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন কিংবদন্তি পল্লীগীতিশিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমেদ। সংগীতনির্ভর এই পরিবারের সদস্য হিসেবে আব্বাসীর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়।
তিনি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এমএ পাস করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়েও অধ্যয়ন করেন।
সঙ্গীতচর্চা, গবেষণা ও সাহিত্য রচনায় সমান পারদর্শী ছিলেন আব্বাসী। বেতার-টেলিভিশনের বহু সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি ছিলেন জনপ্রিয় কলাম লেখকও।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, শিল্পগোষ্ঠীর মহাব্যবস্থাপক ও ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের দীর্ঘদিনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশে গান পরিবেশন করে তিনি বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া ও নজরুলগীতির বিশিষ্ট ধারক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
তিনি ইউনেস্কোর আওতায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতি হিসেবে ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
তার সম্পাদিত ও রচিত উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘লোকসংগীতের ইতিহাস’, ‘ভাওয়াইয়ার জন্মভূমি’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’, ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’, ‘স্বাধীনতা দিনের গান’সহ মোট ২১টি গ্রন্থ।
আজীবন সংগীত ও গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হন।
জাতীয় এই সংগীত ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।



