Top Newsজাতীয়

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ : দেশে প্রয়োজনের তুলনায় নার্স আছে মাত্র ১৮ শতাংশ

মোহনা অনলাইন

আজ সোমবার ( ১২ মে ) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। আধুনিক নার্সিং পেশার পথিকৃৎ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে এ দিনটি পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে দেশের সকল নার্সিং শিক্ষা ও সেবা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি যথাযোগ্যভাবে পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এই দিনটি শুধু নার্সদের অবদানের স্বীকৃতিই নয়, বরং তাদের পেশাগত সংগ্রাম, সেবার মান এবং পেশার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। এবারের প্রতিপাদ্য—‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, নার্সিং পেশার উন্নতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।’

স্বাস্থ্য খাতে নার্সদের সংকট বাংলাদেশের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩। অথচ বাংলাদেশে ১ লাখ ২ হাজার ৯৯৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে নার্স রয়েছেন মাত্র ৭৬ হাজার ৫১৭ জন। এই হিসাবে দেশে প্রয়োজন প্রায় ৩ লাখ নার্স, অর্থাৎ ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৪ জন নার্সের। ফলে রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটছে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও নার্সরা এখনো যোগ্যতা অনুযায়ী স্বীকৃতি ও পদমর্যাদা পাচ্ছেন না। দেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী বহু নার্স থাকলেও অধিকাংশ নার্স স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেই সেই পদে অবসর গ্রহণ করেন। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তারা চরম বৈষম্যের শিকার।

এছাড়া, নার্সদের ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাক পরিবর্তন করে বর্তমান জলপাই রংয়ের পোশাক চালু করা হয়েছে, যা নিয়ে নার্সদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা দাবি জানিয়েছেন, পবিত্রতা ও সেবার প্রতীক সাদা রঙের পোশাক পুনর্বহাল করা হোক।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মানবসেবার অনুভব তাকে নার্সিং পেশার প্রতি আকৃষ্ট করে। পরিবারের বাধা ও সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রাহ্য করে তিনি নিজেকে এই পেশায় দক্ষ করে তোলেন এবং পরবর্তীতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সরাই রোগীদের পাশে অধিক সময় থাকেন এবং আন্তরিক সেবা দিয়ে তাদের আরোগ্য নিশ্চিত করেন। স্বাস্থ্য খাতে নার্সদের অবদান অপরিসীম। অথচ তাদের সুযোগ-সুবিধা, মর্যাদা ও পদোন্নতি নিয়ে অবহেলা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একজন নার্সবান্ধব ব্যক্তি হিসেবে ইতিমধ্যে নার্সদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ন্যাব) সভাপতি জাহানারা সিদ্দিকী বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নার্সরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনো তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত হয়নি। নার্স দিবস উপলক্ষে তিনি সকল নার্সকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের সাদা পোশাক পুনর্বহালসহ সকল যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button