জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সোমবার (১২ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
তাজুল ইসলাম বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এতে তাদের তিনজনকেই আসামি করা হয়েছে।”
চিফ প্রসিকিউটর জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি প্রকাশ করা হয়েছে। বাকি তিনটি আপাতত গোপন রাখা হয়েছে।
প্রকাশিত প্রথম অভিযোগটি হলো— মানবতাবিরোধী অপরাধে উসকানি ও প্ররোচনা। তিনি বলেন, “এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে মন্তব্য করেন, যা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হতে উৎসাহিত করে। এরপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়, যার ফলে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটে।”
দ্বিতীয় অভিযোগটি হলো— সরাসরি হত্যার নির্দেশনা প্রদান। তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি টেলিফোন আলাপ জব্দ করেছে, যেখানে তিনি নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন বলে দাবি করা হয়েছে। এসব কথোপকথনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অভিযোগ গঠন করা হয়।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল এই মামলার তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দায়ের করা আরেক মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ, হত্যাকাণ্ড ও দমন-পীড়নের জন্য শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, যার ফলে প্রাণ হারান প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে।



