প্রবল বর্ষণে বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ। আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরামে গত দু’দিনে বৃষ্টির কারণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩০ জনের। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধসে ভেসে গেছে অসম ও মেঘালয়ের সংযোগকারী ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ, ফলে তুরা থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত সড়কপথ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
শনিবার আচমকা ধসের কবলে পড়েছিল অরুণাচল প্রদেশের রাস্তা; এতে চলন্ত গাড়ি ভেসে যায় এবং দুই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু হয়।
উত্তর সিকিমের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সাম্প্রতিক বর্ষণে অসমের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে সতর্ক স্থানীয় প্রশাসন। অসমের ১২টি জেলায় অন্তত ৬০ হাজার মানুষ বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্ষার শুরুতেই এই ধরনের দুর্যোগ চিন্তা বাড়িয়েছে। শনিবার শুধু উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন অংশে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দফায় দফায় ধস, মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের কারণে বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে মেরামতের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকেরাও আটকে পড়েছেন।
আগামী কয়েক দিনের জন্য আসামের বিস্তীর্ণ অংশে কমলা সতর্কতা এবং উত্তর-পূর্বের বাকি অংশে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে শনিবার মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মোট ন’জনের মৃত্যু হয়েছে; তাঁদের মধ্যে সাতজন একটি গাড়িতে ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব কামেঙের রাস্তা দিয়ে গাড়িটি যাচ্ছিল এবং আচমকা রাস্তাটি ধসে গেলে জলের তোড়ে ভেসে যায়।
অরুণাচলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামা নাটুং এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া, জ়িলোতে ক্যাবেজ গার্ডেন এলাকা ও নিকটবর্তী পাইন গ্রোভে ধস নেমে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে উত্তর-পূর্বের নদীগুলির জলস্তর বাড়ছে; ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বৃষ্টি চলতে থাকলে ব্রহ্মপুত্র শীঘ্রই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করবে। শনিবার গুয়াহাটিতে এক দিনে ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ৬৭ বছরের নজির ভেঙে দিয়েছে।
শনিবার রাতে সিকিমেও মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগের কারণে উত্তর সিকিমে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তিস্তার জল বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে এবং লাচুং ও লাচেনের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সিকিমে দেড় হাজার পর্যটক আটকে পড়েছেন এবং স্থানীয় পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।



