আন্তর্জাতিক

ইরানের পারমাণবিক বাংকার ধ্বংসের একমাত্র অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে

মোহনা অনলাইন

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা এখন রূপ নিয়েছে সরাসরি সংঘাতে। পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় দেশ কার্যত যুদ্ধে জড়িয়েছে। এই সংঘাতের প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট মার্কিন অস্ত্র পুরো যুদ্ধের সমীকরণ পাল্টে দিতে সক্ষম—যার নাম ‘জিবিইউ-৫৭/এমওপি’।

জিবিইউ-৫৭/এমওপি (GBU-57/Massive Ordnance Penetrator) একটি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা। এটি পারমাণবিক নয়, কিন্তু ওজনে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা ১৩,৬০০ কেজি। বিশ্বের সবচেয়ে ভারী প্রচলিত বোমা হিসেবে এটি বিবেচিত। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এই অস্ত্র রয়েছে, এবং এখন পর্যন্ত তারা এটি ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয়নি।

এই বোমা বহনের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের বিমান—বি-২ স্পিরিট বোম্বার। যুক্তরাষ্ট্রের এই স্টিলথ বোমারবাহী বিমান একসঙ্গে দুটি জিবিইউ-৫৭ বহন করতে সক্ষম এবং একটানা প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে, যা ইরান পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট।

ইরান তার পরমাণু স্থাপনাগুলো যেমন ফোর্দো কেন্দ্র, পাহাড়ের গভীরে নির্মাণ করেছে—কিছু কিছু ৮০ মিটার পর্যন্ত গভীরে। সাধারণ বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এইসব স্থাপনা ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু জিবিইউ-৫৭ এই ধরনের গভীর, সুরক্ষিত কাঠামো ভেদ করে ২০০ ফুট বা ৬০ মিটার পর্যন্ত নিচে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। এটি মাটির নিচে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট গভতায় বিস্ফোরিত হয়, ফলে লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আঘাত হানে।

সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির ফেলো কার্লটন হেইলিগ বলেন, “এই বোমাগুলো সাধারণ বোমার মতো সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত হয় না। এগুলো ধীরে ধীরে ভূপৃষ্ঠের গভীরে প্রবেশ করে এবং নির্দিষ্ট স্তরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়।”

যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এমন ১০ থেকে ২০টি জিবিইউ-৫৭ রয়েছে বলে মনে করা হয়। কয়েকটি ইতোমধ্যে ভারত মহাসাগরের একটি মার্কিন ঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে, যা ইরান থেকে মাত্র চার হাজার কিলোমিটার দূরে।

তবে এই বোমা ব্যবহারের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, এমনকি দুটি জিবিইউ-৫৭ দিয়েও ফোর্দোর মতো গভীর ও সুরক্ষিত স্থাপনায় পুরোপুরি ধ্বংসসাধন সম্ভব নাও হতে পারে।

ইসরায়েল বহুদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমকে হুমকি হিসেবে দেখে আসছে এবং এই কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে চায়। তবে তাদের নিজস্ব অস্ত্রভাণ্ডারে জিবিইউ-৫৭-এর সমতুল্য কিছু নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া এই ধরনের গভীর আঘাত সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হলো—যুক্তরাষ্ট্র কি এই সংঘাতে সরাসরি জিবিইউ-৫৭ ব্যবহার করবে? অথবা তারা কি ইসরায়েলকে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেবে? উত্তর এখনো অনিশ্চিত। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই বোমা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত যুদ্ধের গতিপথ একেবারে বদলে দিতে পারে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button