“লিওনেল মেসি হ্যাজ শেকেন হ্যান্ডস উইথ প্যারাডাইস”—কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে লুসাইলের প্রেস বক্সে পিটার ড্রুরির এই বিখ্যাত উক্তি আজও কাঁটা দিয়ে ওঠে কোটি কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকের হৃদয়ে। বাড়িয়ে বলা নয়, সেদিন মেসি যেন সত্যিই স্বর্গের দুয়ার ছুঁয়ে এসেছিলেন। আজ সেই আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকরের ৩৭তম জন্মদিন।
১৯৮৭ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্ম নেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। বাবা জর্জ মেসি ও মা সেলিয়া কুচেত্তিনির ঘরে জন্ম নেওয়া লিও ছিলো তাদের তৃতীয় সন্তান। তবে এই খুদে প্রতিভার শৈশবটা মোটেও সহজ ছিল না। মাত্র ১১ বছর বয়সে ধরা পড়ে গ্রোথ হরমোনের জটিলতা। আর্থিক সংকটে চিকিৎসা করানোও হয়ে পড়ে অসম্ভব।
ঠিক সেই সময়ই বার্সেলোনা এগিয়ে আসে। প্রতিভাবান এই কিশোরকে নেয় তাদের যুব একাডেমিতে, চিকিৎসার দায়িত্বও নেয় কাতালান ক্লাবটি। সেখান থেকেই শুরু হয় কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পথচলা। ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিষেক ঘটে বার্সার মূল দলে। এরপর যা ঘটেছে, তা যেন ফুটবল রূপকথা।
বার্সেলোনার জার্সিতে মেসি একের পর এক গৌরবময় অধ্যায় লিখেছেন। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০০৮ সালে অলিম্পিকে এনে দেন স্বর্ণপদক। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে অনেকদিন সাফল্যের মুখ দেখেননি তিনি।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে হৃদয়ভাঙা পরাজয়, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার টানা দুইবার ফাইনালে হার—সব মিলে জাতীয় দলের জার্সিতে হতাশাই ছিল সঙ্গী। অনেকেই বলতে শুরু করে, “মেসি শুধু ক্লাবের জন্য, দেশের জন্য নয়।” হতাশ মেসি একবার অবসরের ঘোষণাও দেন।
কিন্তু এখানেই গল্প থেমে থাকেনি। ২০১৮ বিশ্বকাপে দলকে বাছাই পর্ব থেকে টেনে তুলে নিয়ে যান। ২০২১ সালে অবশেষে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম শিরোপা এনে দেন—কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে। সে জয় যেন বিগত ব্যর্থতার সব হিসেব চুকিয়ে দিয়েছিল।
তবু তার ফুটবল-ভক্ত জীবনের সবচেয়ে বড় মুহূর্ত আসে ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে।
ফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে মেসি আর্জেন্টিনাকে এনে দেন ৩৬ বছরের প্রতীক্ষিত বিশ্বকাপ।
সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ম্যাচ, সবচেয়ে বেশি গোল, সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট, অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ, সর্বোচ্চ মিনিট খেলা—সবকিছুতে নিজের নাম লিখে নেন মেসি। গোল্ডেন বলও ওঠে তার হাতে, ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দু’বার এই সম্মান অর্জন করেন তিনি।
পেলের সমান ১২ গোল, অসংখ্য অবদান, আর অগণিত ট্রফি জয় করে ফুটবলের ইতিহাসে নিজেকে স্থাপন করেছেন অমরত্বের আসনে।
৩৬টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৩৭ এ পা দিলেন রোজারিওর সেই ছোট্ট ছেলেটি, যিনি এখন ফুটবল বিশ্বের মহানায়ক। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বিকেলেও যিনি প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে চলেছেন।
শুভ জন্মদিন, ফুটবল জাদুকর।



