চলতি জুনের শুরুতে এক শুক্রবার নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি সিদ্ধান্ত নেন পুরো ম্যানহাটন পায়ে হেঁটে প্রচারণা চালাবেন। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু করে তিনি শেষ করেন ভোররাত আড়াইটায়।
বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, নিউইয়র্কবাসীরা তাকে আলিঙ্গন ও করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানাচ্ছেন। জোহরান বলেন, “নিউইয়র্কে এমন এক মেয়র দরকার, যাকে মানুষ দেখতে পাবে, কথা বলতে পারবে এবং নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারবে।”
৩৩ বছর বয়সী এই প্রগতিশীল রাজনীতিক সম্প্রতি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে বিজয়ী হন। তার প্রচারণা এবং ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিউইয়র্কবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে তার প্রার্থিতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের একাংশ ইহুদি সম্প্রদায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্ট জানায়, ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থানের কারণে অনেক ইহুদির মনে প্রশ্ন জেগেছে—এই শহরের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোচ্ছে? ব্রুকলিনের স্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতা জয়ী সাবান বলেন, “এটি ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা।”
নিউইয়র্কবাসী ষাটোর্ধ্ব মিডিয়া পরামর্শক আভিভা মিলার মন্তব্য করেন, “জোহরান ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন এবং তার মনোনয়ন প্রমাণ করে যে শহরে ইহুদিবিদ্বেষ বাড়ছে।” তার মতে, জোহরানের প্রার্থিতা পশ্চিমা সভ্যতা ও মার্কিন পুঁজিবাদী জীবনের জন্য হুমকি।
তবে, অনেক উদারপন্থি ইহুদিরা জোহরানকে সমর্থন জানাচ্ছেন। মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট মনোনয়নপ্রাপ্ত এই প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রগতিশীল ইহুদি রাজনীতিক ব্র্যাড ল্যান্ডারও।
আল জাজিরা এক মতামতে বলেছে, জোহরানের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রে বামপন্থি আন্দোলনের জাগরণকে প্রতিনিধিত্ব করে। ইলহান ওমর ও রাশিদা তায়েবের মতো নেতাদের মতো তিনিও সাম্রাজ্যবাদ, বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন—যা অভিবাসীসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমর্থন পাচ্ছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ প্রগতিশীল ইহুদিদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। তারা প্রবীণ ইহুদিদের নির্বিচারে ইসরায়েল সমর্থনে বিরক্ত।
উল্লেখ্য, উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম নেওয়া জোহরান মামদানি প্রখ্যাত অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ারের সন্তান। তার স্ত্রী সিরীয় শিল্পী রামা দুয়াজি। নির্বাচিত হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র।



