Top Newsআন্তর্জাতিক

আলোচনায় ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে: ইরান

মোহনা অনলাইন

তেহরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভাঞ্চি জানিয়েছেন, আলোচনায় ফিরতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইরানের ওপর আর কোনো হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানকে আলোচনায় ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। তবে আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে হামলা চালাবে কি না, সে বিষয়ে তারা এখনো স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

গত ১৩ জুন রাতে ইসরায়েলের হামলার পর ১৫ জুন ওমানে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফা আলোচনা বাতিল হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ইরানের ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।

তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে চাই এবং আমাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার ছাড়ব না।” তিনি বলেন, “যদি কেউ বলে সমৃদ্ধকরণ চলবে না, না মানলে বোমা মেরে ধ্বংস করে দেওয়া হবে—এটা আন্তর্জাতিক নীতির পরিপন্থী, বরং জঙ্গলের আইন।”

তেহরানে ইসরায়েলের হামলায় সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ১২ দিন স্থায়ী এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে IAEA প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, ক্ষতি গুরুতর হলেও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। এর বিপরীতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” হয়েছে।

IAEA বলছে, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারবে। তবে তাখত-রাভাঞ্চি নিশ্চিত নন, বাস্তবে তা সম্ভব হবে কি না।

সম্প্রতি ইরানি পার্লামেন্ট IAEA-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে, অভিযোগ করে সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ নিচ্ছে। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে ইরান ৩.৬৭%-এর বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত না। কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তি বাতিল করলে ইরান সীমা লঙ্ঘন শুরু করে। IAEA জানায়, ইরান ইতোমধ্যে ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সঞ্চয় করেছে, যা দিয়ে অন্তত ৯টি বোমা তৈরি সম্ভব।

তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, “যদি কেউ মনে করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আর বিনিয়োগের বিনিময়ে আমরা কর্মসূচি থামাব—তাহলে তারা ইরানকে চেনে না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।”

তিনি অভিযোগ করেন, ইউরোপের কিছু নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় সমর্থন দিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা নিচ্ছেন। “যদি আমেরিকার সমালোচনা করার সাহস না থাকে, অন্তত চুপ থাকুন,” বলেন তিনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা ইরানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে না এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে টার্গেট করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।

তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, “এই ধরনের প্রচেষ্টা ব্যর্থই হবে। ইরানিরা সরকারের সমালোচনা করলেও, আগ্রাসনের মুখে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে।”

বর্তমানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবে তা কতদিন চলবে, তা অনিশ্চিত। তিনি বলেন, “যতক্ষণ আমাদের ওপর নতুন কোনো হামলা না হয়, ততক্ষণ আমরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলব।”

তিনি আরও জানান, পারস্য উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় আলোচনা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে কাতারের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাখত-রাভাঞ্চি বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, কূটনীতিতে বিশ্বাস করি। তবে প্রস্তুত থাকতেই হবে—যেন বিস্মিত না হতে হয়।”

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button