
শাহীন রাজা: বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে, নির্বাচন এবং সংস্কারের ইদুর দৌড় চলছে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একদল রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে চায়ছে। আরেকদল সংস্কারের ইস্যুতে নির্বাচনে সময় নিতে আগ্রহী। এর মধ্যে আছে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবী। সাথে গণভোট এবং আনুপাতিক আসনের দাবী। সবই হচ্ছে আগামীতে ক্ষমতা লাভা কিংবা ক্ষমতার অংশগ্রহণের কৌশল। যার ভোটে নির্বাচিত হবে বা ক্ষমতা লাভ করবে, তাদের বিষয়টা কেউ-ই তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
এই বিষয়টা কোন পক্ষের মাথায় আছে কি না, তা কিন্তু স্পষ্ট নয় ! তবে বিষয়টা মাথায় থাকলে বোধহয় তাদের জন্য পথ চলতে সুবিধা হতো। বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ তাঁর নিজের গতিতেই এগিয়ে যাবে। সাথে মেধা এবং শক্তিকে সাথে নিয়ে। মেধাবীরা নাবিকের মতো পথ দেখাবে। আর জনশক্তি তাঁদের শ্রমশক্তি দিয়ে দেশকে সামনের পথে নিয়ে চলবে। আধুনিক রথযাত্রায় অমল, ধবল মেঘেদের সাথে।
জনগণ চায় এই মেধা এবং শ্রমশক্তি ব্যবহারের একটা যথোপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাই একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে। এবং রাজনৈতিক দলগুলো জনকল্যাণ যে সকল পরিকল্পনা নিয়েছে তার বাস্তবায়ন ঘটাবে। কিংবা সংসদে তা নিয়ে আলোচনা করবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। আপনাদের চিন্তা বা পরিকল্পনা’র প্রতি যদি জনগণের সমর্থন থাকে তাহলে নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটবে। চাপিয়ে দিতে গেলেই তাতে আর জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে না। এবং একসময় তা বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা বিগত সরকারের আমলে হয়েছে। অবশেষে দেশ ত্যাগে বিগত সরকার বাধ্য হয়েছে।
একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, ভূরাজনৈতিক অবস্থার কারণে বহিঃশক্তি বেশ তৎপর। বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে ঘর এবং ঘরের বাইরের লোকদের ঘুম চলে গেছে। এদের একটাই উৎকন্ঠা, বাংলাদেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে ! এই দেশটাকে সুস্থ করে তুলতে হবে। রোগ সাড়াতে স্থানীয় দালাল বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, এই অঞ্চলের বিশেষ করে নিকটতম প্রতিবেশী’র সহযোগিতা লাগবে। এর বাইরে হবে না সমাধান।
সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ মনে করে, প্রতিবেশী দ্বারা দেশের কোন কল্যাণ আসবে না। গত দেড় দশকে, তাই প্রমাণিত হয়েছে। তাই অতলান্তের ওপারের শক্তির সহযোগী লাগবে। এরা হচ্ছে পরিশীলিত দালল। এই দালাল গোষ্ঠী যুক্তি দেখায়, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটাতে তাদের সহযোগিতা জরুরী !
একথা-ও সত্য , বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনীতিক পরিক্রমা খুব সুখকর নয়। এ দেশের রাজনৈতিক দল এবং দলীয় নেতাদের ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ আজ অসুস্থ। এ দেশের রাজনীতি চলতে, চলতে একসময় জট লেগে যায়। চলার পথের এই জট রাজনৈতিক দল ও নেতাদের পক্ষে খোলা সম্ভব হয় না ! সমাধানে স্থানীয় দেশপ্রিয় শৃঙ্খল শক্তিকে আসতে হয়েছে। কিংবা আসে নিকট প্রতিবেশী। রাজনৈতিক সমাধানে এখন দোরগোড়ায় পরাশক্তি দেশের দরজায় নক করছে !
এ দেশের জনগণের দূর্ভাগ্য হচ্ছে, এখানকার বুদ্ধিদীপ্ত রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক এবং রাষ্ট্রের আশীর্বাদ পুষ্ট বানিজ্যিক গোষ্ঠী আঞ্চলিক শক্তি বা পরাশক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে যায় ! এমনকি স্বাগত জানানোর জন্য ঢোল ডগর নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যায় !
ব্যর্থ রাজনীতিক, দালাল গোষ্ঠী জানে না, আঠারো কোটি মানুষকে বাদ দিয়ে কোন চিন্তা বাদ দিয়ে এখানে কেউ সফল হতে পারেনি। হয়তো ভবিষ্যতে-ও পারবে না। এই আঠারো কোটি মানুষেই হচ্ছে বাংলাদেশের মূল শক্তি। এদের মেধা এবং শ্রমশক্তি-ই বাংলাদেশকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে । এবং আগামীতে এঁরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। রাজনীতিকদের কাছে অনুরোধ, এদেরকে বাংলাদেশ দেখভাল করতে দেন। আর আপনারা আপনাদের কাজটা ঠিক মতো পালন করেন। পারেন যদি তাহলে উন্নয়নের সঠিক পথটি দেখান।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত অনেকেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই মনে করতেন দেশ পরিচালনা করতে গেলে বিদেশী শক্তির সমর্থন প্রয়োজন। বিদেশী শক্তিকে তারা বন্ধু হিসেবে দেখেননি। অনেকটা অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করতেন।
এর ব্যতিক্রম ছিলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি দেশের উন্নয়নে, উন্নত বিশ্বের সহযোগিতা নিয়েছেন উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে। অভিভাবক হিসেবে নয়। বহিঃশক্তি তাঁর এই কর্মকাণ্ডে প্রসন্ন ছিল না। একারণেই তাঁর অকাল প্রয়াণ হয়েছে। বাংলাদেশ হারিয়েছে এক যোগ্য অভিভাবক।
সঠিক রাজনীতি এবং নেতৃত্ব থাকলে দেশ তাঁর গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আমরা দেখি, বৃহৎ শক্তি জার্মানীর পাশে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বেলজিয়ামের মতো শান্তি এবং স্বকীয়তা নিয়ে বসবাস করছে। আমেরিকার পাশে কিউবার মতো স্বাধীন জাতিসত্তা নিয়ে বসবাস করছে, বিপ্লবের পর থেকে এখন অব্ধি । চীনের পাশে ভিয়েতনাম কার সাথে সম্পর্ক রাখবো না রাখবো সেটা তারাই ঠিক করছে ! আমাদের ভৌগোলিক বা আর্থিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিশ্বের যে কোন দেশের সাথে আমরা সম্পর্ক স্থাপন করবো। তবে সবটাই দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে।
দেশে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। তাই সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, বানিজ্যিক এবং দেশপ্রিয় বাহিনী বা জনগণের প্রতি অনুরোধ। অশুভ বা অসম প্রতিযোগিতা না করে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন দিনের সন্ধান করি। যেখানে সন্তান দেরী করে বাড়ি ফিরলে অভিভাবের মনে অশু ভাবনা আসবে না। শিক্ষার্থী, শিক্ষা সমাপ্ত করার পর কর্মসংস্থানে হতাশায় ভুগবে না। কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য মুল্য না পেয়ে চোখের জল ফেলবে না। কিংবা পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা ঈদ আনন্দের পরিবর্তে, ঈদেরে আগের বেতন ভাতার দাবীতে মহাসড়কে রৌদ্র, বৃষ্টিতে ভিজবে না।
আমরা যদি ব্যর্থ হই তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা ব্যর্থ প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবো চিরকাল !