আন্তর্জাতিক

১০০তম জন্মদিনে যা বললেন মাহাথির

মোহনা অনলাইন

মানবজীবন দীর্ঘ হতেই পারে। কিন্তু সব দীর্ঘজীবনই মহিমান্বিত হয় না। দীর্ঘ সে জীবন যদি ত্যাগ স্বীকারের হয়, অপরের কল্যাণে হয়, তবে সে জীবন একই সঙ্গে হয় সফল। দীর্ঘ ও সফল জীবনের এক উদাহরণ ড. মাহাথির মোহাম্মদ। তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি, যিনি প্রথম দফায় (১৯৮১-২০০৩) দীর্ঘ ২২ বছর সফলভাবে দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। মালয়েশিয়াকে করেছেন একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র।

দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই বর্ষীয়ান নেতা জন্মদিনের প্রাক্কালে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, গণতন্ত্র যেমন কাজ করেনি, তেমনি আধুনিক সভ্যতাও ব্যর্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাহাথির গণতন্ত্র নিয়ে সংশয় প্রখাম করে বলেন, “গণতন্ত্র মানুষের তৈরি একটি পদ্ধতি। এটি নিখুঁত নয়। একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে এর থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না।”

তার মতে, বহুদলীয় গণতন্ত্র বরং দুর্বলতা তৈরি করে।

মাহাথির বলেন, “গণতন্ত্রে শুধু দুইটি রাজনৈতিক দল থাকলে ভালো হয়। তখন একটি জিতবে, একটি হারবে—এভাবে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন সম্ভব। কিন্তু সবাই নেতা হতে চায়, ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়, ফলে কোনো পক্ষই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই বহুক্ষেত্রেই গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মাহাথির সরাসরি অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ একপ্রকার গণহত্যা, আর যুক্তরাষ্ট্র এর পেছনে থেকে সেটা চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে।

তিনি আরও বলেন, “একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে ক্ষুধা ও যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র সেই অপরাধীদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, এটা পশ্চিমা সভ্যতার পতনের প্রতিচ্ছবি। আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষ হয়ে আমরা এখন আবার বর্বরতায় ফিরে গেছি।”

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বনেতা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মাহাথিরের ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্র এখন আর মানবাধিকারের কথা বলে না, মানুষের জীবন নিয়েও ভাবে না। বিশ্বে তারা আর নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত নয়।”

১৯২৫ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ উপনিবেশ মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন মাহাথির। পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হন মাত্র ২১ বছর বয়সেই। ১৯৬৪ সালে পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন।

তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন এবং টানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন, যেটি দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম। তার শাসনামলে মালয়েশিয়া অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করে। ৮০ পেরিয়েও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৮ সালে আবারও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন এবং দুই বছর পর রাজনৈতিক জোট ভেঙে পড়ার কারণে পদত্যাগ করেন।

নিজের শতবর্ষের দীর্ঘ জীবনের পেছনে কী রহস্য আছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, “অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া না করাই ভালো। আমি নিয়মিত শরীরচর্চা করি, মস্তিষ্কের ব্যায়াম করি— পড়াশোনা করি, লিখি, কথা বলি, বিতর্ক করি, নিজেকে সক্রিয় রাখি।”

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button