বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ঠিক কবে হবে, এই প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে সন্দেহ, সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ এবং নিজের নিরপেক্ষতার প্রশ্নেও জবাব দিয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারার প্রশ্ন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পাঠকদের জন্য বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো।
বিবিসি বাংলা: এখনো জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি। আপনি কি বলতে পারেন নির্বাচন কবে হবে?
সিইসি নাসির উদ্দিন: এটা বলা আমার জন্য কঠিন, কারণ আমিও এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ জানি না। ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে, অথবা এপ্রিলের প্রথমার্ধে হতে পারে। সরকার আমাদের এখনো কিছু জানায়নি, তাই আমরা অনুমান করেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচন নিয়ে সরকার আপনাদের কোনো দিকনির্দেশনা দিয়েছে কি?
নাসির উদ্দিন: না, সরকার থেকে কোনো আদেশ, পরামর্শ বা নির্দেশনা পাইনি। আমরা একেবারেই স্বাধীনভাবে আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বিবিসি বাংলা: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎকারে কী আলোচনা হয়েছে?
নাসির উদ্দিন: এটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। যদিও নির্ধারিত কোনো এজেন্ডা ছিল না, উনি জানতে চেয়েছেন আমাদের প্রস্তুতির অগ্রগতি কী। আমি বিস্তারিত জানিয়েছি। তবে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আমি কোনো প্রশ্ন করিনি।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ আছে বলে আপনি মনে করেন?
নাসির উদ্দিন: এটা চ্যালেঞ্জিং হলেও সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি করেছে। সব দলই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। জনগণ পাশে থাকলে মব বা বিশৃঙ্খলা বড় সমস্যা হবে না।
বিবিসি বাংলা: আপনারা নিরপেক্ষ থাকবেন কি-না, এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আপনি কী বলবেন?
নাসির উদ্দিন: আমি শপথ নিয়েছি নিরপেক্ষ থেকে কাজ করার। ইসিতে আমরা সবাই একসাথে সিদ্ধান্ত নিই, কারো মত চাপিয়ে দিই না। সময়ের সাথে মানুষ বুঝবে আমরা ন্যায়নিষ্ঠভাবে কাজ করছি।
বিবিসি বাংলা: বিএনপির প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগও এসেছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?
নাসির উদ্দিন: আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই, বিএনপিও না। এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। আমার লক্ষ্য সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া—বিচারকের মতো দায়িত্ব পালন করা।
বিবিসি বাংলা: ইশরাক হোসেনকে নিয়ে ইসির গেজেট প্রসঙ্গে বলছেন, সেটা কি আদালতের নির্দেশেই ছিল?
নাসির উদ্দিন: হ্যাঁ, সেটা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায়ের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। এখানে ইসির পক্ষপাতের প্রশ্নই আসে না।
বিবিসি বাংলা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকার কারণে তারা কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না?
নাসির উদ্দিন: বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আমরা আইন অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন স্থগিত করেছি। অংশগ্রহণ না করলে ইনক্লুসিভ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি ভোটার অংশ নেয় সেই দিকে নজর দেওয়া।
বিবিসি বাংলা: স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন?
নাসির উদ্দিন: না, আমরা এখন শুধু জাতীয় নির্বাচন নিয়েই ভাবছি। স্থানীয় নির্বাচন অনেক ধাপের, সময়সাপেক্ষ। এখন সেই সময় নেই।
বিবিসি বাংলা: নতুন দলগুলোর নিবন্ধন যাচাই কীভাবে করছেন?
নাসির উদ্দিন: ১৫০-এর বেশি আবেদন এসেছে। আমরা যাচাই করছি, যাদের ডকুমেন্ট কম আছে তাদের সময় দিয়েছি। যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে না, তারা নিবন্ধন পাবে না। আমাদের ফিল্ডে ৫৭০০ লোক কাজ করছে—তাদের মাধ্যমেই যাচাই চলছে।
বিবিসি বাংলা: এনসিপি ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী?
নাসির উদ্দিন: শাপলা জাতীয় ফুল হওয়ায় আমরা কমিশনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শাপলা প্রতীক আর কাউকে দেওয়া হবে না—কাউকেই না। নাগরিক ঐক্যও আগে আবেদন করেছিল, কিন্তু আইনি বিষয় বিবেচনায় প্রতীকটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি বাংলা: জামায়াতকে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে বলবেন?
নাসির উদ্দিন: আদালতের আদেশে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল, এখন স্ট্যাটাস কোর মাধ্যমে প্রতীকসহ রেজিস্ট্রেশন ফিরে পেয়েছে। প্রতীকসহই সেটা ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।
বিবিসি বাংলা: এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কী অর্জন রেখে যেতে চান?
নাসির উদ্দিন: দেশের সংকটময় সময়ে দায়িত্ব নিয়েছি—আমি নিরপেক্ষভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। হাসিমুখে এসেছি, হাসিমুখে বিদায় নিতে চাই। এ জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।



