৩০ বছর আগে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে। মেয়াদোত্তীর্ণের আগে এ চুক্তি নবায়নে প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের (JRC) কারিগরি পর্যায়ের বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও ভারত।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি কারিগরি দল বৈঠকে অংশ নেবে। আলোচনার মূল এজেন্ডা থাকবে গঙ্গা চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও নবায়ন বিষয়ে প্রস্তুতি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চুক্তিতে সই করেছিলেন। চুক্তির আওতায় প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত দুই দেশ ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করে নেয়।
২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই দেশ চুক্তি নবায়নে সম্মত হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং সম্প্রতি দেশটির সংসদে বলেন, “নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে বিভিন্ন অংশীজন, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী থাকলেও এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়েই চুক্তি হয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি এখনো আলোর মুখ দেখেনি, যার প্রধান কারণ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিমত।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় গঙ্গার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। যৌথ নদী কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পানি ভাগাভাগি গাইডলাইন অনুযায়ী ঠিকভাবেই হচ্ছে, তবে প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশে চাষাবাদ ও জনজীবনে প্রভাব পড়ছে। দিল্লি বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরবে বাংলাদেশ পক্ষ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তি নবায়নকে সামনে রেখে টেকনিক্যাল আলোচনা চলবে, এরপর উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত চুক্তি নবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।
ঢাকা ও দিল্লি উভয় পক্ষই চাইছে একটি স্বচ্ছ ও বাস্তবভিত্তিক পানি চুক্তি, যা ভবিষ্যতের জলবায়ু সংকট ও পানি নিরাপত্তা বিবেচনায় টেকসই হবে।
“
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়ে পড়লেও পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুই পক্ষই আলোচনায় সক্রিয় রয়েছে। গত মার্চে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে গঙ্গার পানি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যদিও কিছু বিষয়ে একমত না হওয়ায় বৈঠকের কোনো ‘মিনিটস’ স্বাক্ষরিত হয়নি।



