আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছেন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন কেবল জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নয়, বরং জনগণের মতামত প্রকাশ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মৌলিক অধিকার। তাই নির্বাচন যতটা স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে, দেশের গণতন্ত্র ততটাই সুসংহত হবে।
সরকার জানিয়েছে, নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেন সহিংসতা বা অনিয়ম ঠেকানো যায়। সেনাবাহিনীর প্রস্তুতিও জনগণের মাঝে আস্থা জোগাচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে ভোটাররা নিরাপদ বোধ করেন এবং নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। এবারও সেনাবাহিনী অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচন কমিশনও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাইসহ নানা প্রক্রিয়া চলছে। একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কমিশনের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করার প্রত্যাশা রয়েছে।
তবে শুধু সরকারি প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়। নির্বাচনকে সফল করতে হলে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, গণমাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকা এবং জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ অপরিহার্য। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে হতে হবে দৃঢ়, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে। সরকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনবে।
ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। রাজধানী থেকে তৃণমূলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ গোছানোয় ব্যস্ত। ইসি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করেছে এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে ম্যাজিস্ট্রেটসির ক্ষমতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো মাঠে অবস্থান মজবুত করতে কৌশল নির্ধারণ করছে। তবে জুলাই সনদ, বিচার প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে কি না—এ নিয়ে সংশয় এখনো রয়ে গেছে। রোজার আগে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ইসিকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সেই অনুযায়ী কাজও চলছে। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।



