বিশ্ববাজারে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে সোনার দাম। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ডলার অতিক্রম করেছে। গতকাল মঙ্গলবার এই প্রথম প্রতি আউন্স সোনার দাম চার হাজার ডলার ছুঁয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। খবর এএফপি, রয়টার্স।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বেড়ে যাওয়া, স্বর্ণনির্ভর এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা, খুচরা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ—এসব কারণে সোনার দামের এই উল্লম্ফন। বাণিজ্যযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনাকে বেছে নিচ্ছেন। ফলে ১৯৮৬ সালের পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সোনার দাম সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। খবর সিএনএনের
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সরকারি অচলাবস্থা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনা কেনায় আগ্রহী হচ্ছেন। এর ফলেই দাম ঊর্ধ্বমুখী।
এদিকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার আবার সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার দেশের ইতিহাসে এই প্রথম সোনার দাম দুই লাখ টাকা ছাড়ায়।
জুয়েলার্স সমিতির তথ্যানুযায়ী, দাম বাড়ার পর দেশের বাজারে আজ বুধবার থেকে ভালো মানের এক ভরি, অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের হলমার্ক করা সোনা কিনতে খরচ করতে হবে ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭২ টাকায় বিক্রি হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, কম সুদের হার ও অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিবেশে সোনার দাম সাধারণত বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে সোনা নির্ভরযোগ্য রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত। কেননা, মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সোনার দাম কমে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন থাকায় ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকেরা এখন সরকারি অর্থনৈতিক তথ্য পাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করার চেষ্টা করছেন। বাজার বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, আগামী ২৮-২৯ অক্টোবরের বৈঠকে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার ১ চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমাতে পারে। শুধু তা–ই নয়, ডিসেম্বরেও তারা নীতি সুদহার কমাতে পারে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াও ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে।



