গাজা যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। সোমবার (১৩ অক্টোবর) এই বড় পরিসরের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় কারাগার দপ্তর। এটি গাজা যুদ্ধবিরতির পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দু’টি পৃথক ব্যাচে মুক্তি পেয়েছেন এসব বন্দিরা। প্রথম ব্যাচে ছিলেন প্রায় ২ হাজার বন্দি, যাদের রাখা হয়েছিল পশ্চিম তীরের ‘ওফের’ কারাগারে। সোমবার দুপুরে তারা রামাল্লার পাশের বেইতুনিয়া শহরে এসে পৌঁছান। তাদের পরিবহনের দায়িত্বে ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইসিআরসি)। বন্দিদের মধ্যে বহুজন বছরের পর বছর ধরে বিনা বিচারে আটক ছিলেন বলে দাবি করেছে ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
একই সময়, গাজার খান ইউনিস শহরে পৌঁছায় দ্বিতীয় ব্যাচের ১ হাজার ৭১৮ জন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি। তারা বন্দি ছিলেন ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় নাগেভ কারাগারে। এই ব্যাচের অনেকেই ছিলেন ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি অভিযানের সময় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি। এমনকি এদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও ছিলেন।
গাজায় পৌঁছানোর পর বন্দিদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় খান ইউনিসের নাসার মেডিকেল কমপ্লেক্সে। দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকা এসব ফিলিস্তিনিকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয় শত শত মানুষ—বাড়ির সদস্য, প্রতিবেশী, বন্ধু এবং সহমর্মী নাগরিকেরা।
এদিকে, পশ্চিম তীরেও বেইতুনিয়া শহরের রাস্তায় দেখা যায় আবেগঘন দৃশ্য। বন্দিদের বরণ করে নিতে অপেক্ষা করছিলেন বহুদিন ধরে অপেক্ষমাণ স্বজনেরা। চোখে জল, হাতে ব্যানার, আর প্রতীক্ষার ক্লান্তি নিয়ে তারা আলিঙ্গন করেন প্রিয়জনদের।
যদিও এ নিয়ে ইসরাইল সরকার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি, তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি যুদ্ধবিরতির আওতায় সম্পাদিত গোপন আলোচনারই অংশ। অন্যদিকে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি তাদের কূটনৈতিক চাপের ফল এবং ফিলিস্তিনি জনগণের একটি বিজয়।
গাজা ও পশ্চিম তীরের সাধারণ মানুষ এই মুক্তিকে দেখছেন আশার আলো হিসেবে। তবে একই সঙ্গে উদ্বেগ রয়ে গেছে—এই শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, আর মুক্তি পাওয়া বন্দিরা আবারও নতুন করে দমন-পীড়নের মুখে পড়বেন কিনা।
একটি প্রশ্ন থেকেই যায়: এই মুক্তি কি ফিলিস্তিনি-ইসরাইল সম্পর্কের বরফ গলানোর প্রথম ধাপ, নাকি এটি কেবল যুদ্ধবিরতির এক সংক্ষিপ্ত সময়সীমার মানবিক রূপায়ণ? সময়ই দেবে তার উত্তর।



