লস অ্যাঞ্জেলেসের ঐতিহ্যবাহী র্যাডফোর্ড স্টুডিও সেন্টার-এ গত শনিবার অনুষ্ঠিত ৩৫তম এনভায়রনমেন্টাল মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন (ইএমএ) অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এ বাংলাদেশের নির্মিত পরিবেশভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “নিশি” অর্জন করেছে সেরা ছাত্র চলচ্চিত্র (Best Student Film) পুরস্কার।
এটি বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন, কারণ এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হলো। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা ও টেকসই চলচ্চিত্র নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান আরও এক ধাপ উঁচুতে পৌঁছেছে।
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এনভায়রনমেন্টাল মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন (ইএমএ) একটি অলাভজনক সংস্থা, যা বিনোদন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থেকে পরিবেশবান্ধব বা সবুজ উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে। বহু বছর ধরে তারা “ইএমএ গ্রিন সিল” ও “ইএমএ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড”-এর মাধ্যমে এমন চলচ্চিত্র ও প্রযোজনাকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে, যেখানে চিত্রগ্রহণ ও প্রযোজনায় কার্বন নির্গমন ও বর্জ্য হ্রাসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এ বছর প্রথমবারের মতো ইএমএ কর্তৃপক্ষ গ্রিন ফিল্ম স্কুল অ্যালায়েন্স-এর সহযোগিতায় “ছাত্র বিভাগ” যুক্ত করেছে। এতে “গ্রিন সিল” পাওয়া ছাত্র প্রোডাকশনগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইন বাংলাদেশ -এর পৃষ্ঠপোষকতায়, গ্রিন ফিল্ম স্কুল অ্যালায়েন্স ও ইউনেসকো ঢাকা অফিস-এর সহায়তায়, ইসাবেলা ফাউন্ডেশন-এর তত্ত্বাবধানে এবং আইএএফএম (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ইকো ফিল্ম ল্যাব : ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম রেসিডেন্সি-র প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলো “নিশি”।
চলচ্চিত্রটির প্রযোজনায় আইএএফএম ছাড়াও যৌথ প্রযোজক হিসেবে যুক্ত রয়েছে—বাংলাদেশের জহিরুল ইসলাম প্রোডাকশনস, সৌদি আরবের থার্ড অ্যাকশন, জার্মানির মোগাডর ফিল্ম, এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্ম্যাশ মিডিয়া। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো সৌদি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যুক্ত হলো।
সিলেটের কুলাউরার মনোরম চা-বাগানের প্রাকৃতিক পরিবেশে চিত্রায়িত “নিশি” চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে সৃষ্ট পানি সংকট ও এক নারী শিশুর করুণ বাল্যবিবাহের কাহিনি।
চলচ্চিত্রটি দলগতভাবে নির্মাণ করেছেন জহিরুল ইসলাম কচি ও গোলাম রাব্বানী। গল্প লিখেছেন গোলাম রাব্বানী নিজেই।
চিত্রগ্রহণ ও পোস্ট-প্রোডাকশন সহযোগিতা দিয়েছে ইউরোপের অন্যতম খ্যাতনামা চলচ্চিত্রবিদ্যা প্রতিষ্ঠান পোল্যান্ডের লজ ফিল্ম স্কুল । “নিশি”র চিত্রগ্রাহক ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী নাটালিয়া পোষনিক। ইকো ফিল্ম ল্যাবের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের দায়িত্ব পালন করেন লজ ফিল্ম স্কুলের একজন নারী চিত্রগ্রাহক। শব্দগ্রহণে ছিলেন থোয়াই।
চিত্রগ্রহণ শেষে নিয়ম অনুযায়ী চলচ্চিত্রের রাফ কাট পাঠানো হয় সানড্যান্স কোল্যাব -এর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন নামী ফিল্ম স্কুলে। “নিশি” পাঠানো হয় লজ ফিল্ম স্কুলে, যেখানে সম্পন্ন হয় চলচ্চিত্রটির সম্পূর্ণ সম্পাদনা, শব্দ সংযোজন ও রঙ সংশোধন (কালার গ্রেডিং)।
ইএমএ অ্যাওয়ার্ডস বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব প্রযোজনা, সবুজ উদ্যোগ ও সচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখা নির্মাতাদের স্বীকৃতি দেয়।



