আজ ১৬ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিশ্ব খাদ্য দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে এ দিবসটি পালন করা হবে। দিবসটির প্রতিপাদ্যে হলো ‘হাত রেখে হাতে, উত্তম খাদ্য ও উন্নত আগামীর পথে’।
বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং টেকসই খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে।
দেশে যখন বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করা হচ্ছে, তখন খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু জমি কমছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে প্রায় ২১ কোটি ৫৪ লাখ। তখন বছরে চার কোটি ৪৬ লাখ টন চালের প্রয়োজন হবে, কিন্তু কৃষিজমি হ্রাস পেলে এই চাহিদা পূরণ কঠিন হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে আবাদি জমি প্রায় ২০.০৮ লাখ একর থেকে কমে এসেছে ১৯.৮৩ লাখ একরে। অর্থাৎ মাত্র তিন বছরে ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত কয়েক বছরে ২ শতাংশ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে গেছে, যা খাদ্য উৎপাদনের জন্য বড় হুমকি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কৃষিজমির অন্য কাজে ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নতুন আইন করা হচ্ছে। কৃষিজমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে অননুমোদিত স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি অনধিক দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এমন বিধান বাস্তবায়নের ফলে দেশের
কৃষি উন্নয়নের স্বপ্ন আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। ব্রির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দেশের ধান উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টন। সরকারি এই সংস্থা গবেষণা করে দেখিয়েছে, ধান উৎপাদনের নানা সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলে ২০৩০ সালে চার কোটি ৬৯ লাখ টন, ২০৪০ সালে পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার টন এবং ২০৫০ সালে ছয় কোটি আট লাখ ৫০ হাজার টনে উন্নীত করা যাবে। এর জন্য দরকার ধানের উন্নত জাতের উদ্ভাবন, অব্যবহৃত জমির ব্যবহার, আধুনিক সেচব্যবস্থা ও যান্ত্রিকীকরণ।
বিজ্ঞানীদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষিনীতির বাস্তবায়ন করা হলে ২০২৯ সালের মধ্যেই ধান উৎপাদনে শ্রম-উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করা সম্ভব। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ১২১টি ধানের জাত রয়েছে, যা বিভিন্ন মাটিতে আবাদ উপযোগী। এখন এলাকাভিত্তিক গবেষণা করে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর বাইরে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটও বিভিন্ন ধরনের ধানের জাত উদ্ভাবন করছে। আর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন খাদ্যশস্যের প্রায় ৭০০ নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে আরো কয়েক শ।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ বলেন, দেশের মোট আবাদি জমির ৭৮ শতাংশই ধান চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে আমাদের হাতে মাত্র ১৩-১৪ শতাংশ জমি থাকে, যেখানে ধান ছাড়া সব ধরনের শাক-সবজি, তেলজাতীয় ফসল, ফলমূলসহ অন্য খাদ্যশস্যের গবেষণা করা হয়।



