Top Newsআন্তর্জাতিক

নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী হলেন আরও ২ জন, ফের বিতর্কের ঝড়

নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী হলেন আরও ২ জন। দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশিলা কার্কি তৃতীয়বারের মতো তার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেছেন। নতুন দুই মন্ত্রী যুক্ত হওয়ায় মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এর আগে কার্কি ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার মন্ত্রিসভা সর্বোচ্চ ১১ সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল রোববার (২৬ অক্টোবর) শীতল নিবাসে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রী হিসেবে সুদা শর্মা গৌতম এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবে বাবলু গুপ্তকে শপথবাক্য পাঠ করান।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদা শর্মা ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নেপালের স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসর-পরবর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি দুটি বইও লিখেছেন—‘সিংহদরবার কো ঘুমনে মেচ’ (সরকারি আমলাতন্ত্রে তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে) এবং ‘অপ্রমেয়’, যেখানে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা যায়।

অন্যদিকে, ২৮ বছর বয়সী সমাজকর্মী গুপ্ত কাঠমান্ডুর ‘হান্ড্রেড গ্রুপ’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা খরচে শিক্ষা, আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন। গত সেপ্টেম্বরের দুর্নীতিবিরোধী জেন জি আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।

তবে মন্ত্রিসভার সর্বশেষ সম্প্রসারণও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় জানিয়েছে, রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী চারজনের নাম শপথের জন্য পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মাত্র দুজন শপথ নেন। বাকি দুজন, দলিত অধিকারকর্মী খগেন্দ্র সুনার এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণকর্মী গণপতি লাল শ্রেষ্ঠার নাম বাদ দেওয়া হয়।

সুনারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় এবং পুলিশ তালিকায় পলাতক হিসেবে নাম ওঠায় তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। অন্যদিকে, শ্রেষ্ঠা ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মন্ত্রণালয় বণ্টন নিয়ে মতবিরোধের কারণে তার নামও বাদ দেওয়া হয়। কার্কি তাকে ভূমি, সমবায় ও দারিদ্র্য বিমোচন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শ্রেষ্ঠা সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় পেতে আগ্রহী ছিলেন।

এর আগে, গত ২২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণেও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে সংগীতা মিশ্রার নাম প্রস্তাব করা হলেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তার নাম প্রত্যাহার করা হয়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা অজয় ভদ্র খানাল বলেন, মন্ত্রিপরিষদ গঠনের প্রতিবারই বিতর্ক তৈরি হচ্ছে কারণ কোনো যাচাই-বাছাই বা ‘ভেটিং’ ব্যবস্থা নেই। আগে থেকে নাম প্রকাশ করলে নানা চাপ আসে, আবার গোপনে করলে প্রার্থীর অতীত কার্যকলাপ জানা কঠিন হয়ে পড়ে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, শ্রেষ্ঠার ভূমি-সংক্রান্ত একটি মামলাও আদালতে বিচারাধীন থাকায় তার শপথ বাতিল করা হয়। তবে ভবিষ্যতে মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে সমঝোতা হলে তাকে ফের অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

দলিত নেতা খগেন্দ্র সুনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা, বহুবিবাহ, এমনকি সরকারি স্থাপনা ভাঙচুরের মতো একাধিক মামলা চলছে। সুপ্রিম কোর্ট তার আচরণের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশও দিয়েছে। ২০২০ সালে রুকুম পশ্চিমে জাতিগত সহিংসতায় দলিত তরুণদের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য আলোচনায় আসেন।
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button