বাংলা চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিভাবান চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটক, তার সিনেমা ও চিন্তাকে সমসাময়িক বাস্তবতায় উপলব্ধি করার আহ্বানে পালিত হয়েছে ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্মশতবার্ষিকী।
আজ ৪ নভেম্বর বিকাল ৫টায় “শতবর্ষী ঋত্বিক ঘটক” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটিজ, বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরাম এবং বাংলাদেশ উদিচী শিল্পীগোষ্ঠি ।
আয়োজন উদ্বোধন করতে গিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ঋত্বিক ঘটককে চলচ্চিত্রের কবি মন্তব্য করে বলেন “আমি যশোরের নিরালা সিনেমা হলে প্রথমবার তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটা দেখি। বিরাট সিনেমা। সিনেমাটা আমার বাংলা সিনেমার সম্পর্কে ধারণা বদলে দেয়। ঋত্বিক কুমার ঘটক সিনেমা কবি। তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের জন্য চাদা তুলতেন। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা!”
আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লেখক ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন “ঋত্বিকের সিনেমাগুলো নতুন করে দেখানোর ব্যবস্থা করা জরুরি। তার সিনেমা সৃজনশীলতার কারনেই এখনো বর্তমানের সিনেমা। ঋত্বিক আমাদের লোক কিনা? আমার কথা হচ্ছে, যিনি মানবিকতার জন্য কাজ করেন, তিনি আমাদের লোক। তার যদি তিনি বাংলায় শিল্পকর্ম করেন, তাহলে তো কথাই নেই। তার ছবিগুলো নতুন করে আবিস্কৃত হোক।”
আয়োজনের মূল আলোচক চলচ্চিত্র পরিচালক আকরাম খান বলেন “এই সময়ে এসে নতুন করে ঋত্বিক পাঠের প্রয়োজনীয়তা আছে। তার সিনেমায় ইমেজ যে দার্শনিক অর্থ নিয়ে তৈরি করা তা বুঝতে আমাদের মনযোগ দরকার”
প্রখ্যাত প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা,বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিষয়ক পরিচালক শাহীন দিল রিয়াজ বলেন, শিল্পকলা এক ধরনের সংস্কারের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাইছি চলচ্চিত্র শিল্পকলা চর্চার প্রধান মাধ্যম হোক। ঋত্বিকের সিনেমা দেখার সময় ইমোশনাল হয়ে যাই, মনে থাকে না আমি ফিল্মমেকার।
একাডেমি,বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটিজ ও বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন নিজের জীবনকে ইতিহাসের মধ্যে স্থাপন করেছেন ঋত্বিক। যদিও তিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হননি। তারপরও তার সিনেমা এপিক। আমরা আগামীতে তার প্রত্যেকটি সিনেমাকে ধরে ধরে আলোচনা করা, কর্মশালা বা সেমিনার করা হবে। তিনি প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন আমাদের কাছে।
আলোচনা শেষে তিতাস একটি নদীর নাম প্রদর্শনী করা হয়।
উল্লেখ্য,ঋত্বিক কুমার ঘটক বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অন্যতম পথপ্রদর্শক। দেশভাগ থিমের ওপর নির্মিত ত্রয়ী সিনেমার জন্য তিনিবিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। তার ‘মেঘে ঢাকা তারা’,‘কোমল গান্ধার’ ও ‘সুবর্ণরেখা’ চলচ্চিত্রগুলি বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের অঙ্গ।



