এডিস মশার বিস্তার, উৎপাত ও ডেঙ্গু শনাক্ত ভয়াভহ আকারে বাড়ছে। দেশের হাসপাতালগুলোতে এখন ডেঙ্গু রোগীর উপচে পড়া ভিড়। মৃতের সংখ্যাও এ পর্যন্ত ৩০৭ জন। এক সময় বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে চিন্তায় থাকতো মানুষ। কিন্তু এখন আর কোনো মৌসুম নেই। বছরের যেকোনো সময়ই হতে পারে ডেঙ্গু জ্বর।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নগরায়নসহ নানা কারণে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আর এ কারণেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একদিকে যেমন ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে হবে আবার ভ্যাকসিন বা টিকার ব্যবহারও বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় ভ্যাকসিন নিয়ে কথা উঠেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আছে দুটি টিকা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে, সেগুলো ব্যবহারেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। আর এ কারণেই বিশ্বের অনেক দেশ ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও বাংলাদেশ এখনো এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এছাড়া টিকা ব্যবহারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির বিষয়টিও জড়িত বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘টিকার অনুমোদন দিতে আগে এই রোগকে এপিডেমিক ডিক্লেয়ার করতে হবে। কিন্তু সেটা করলে তো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।’
এ ছাড়া এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। ডেঙ্গু মোকাবিলায় টিকার থেকে মানুষের সচেতনতা বেশি জরুরি বলেও মনে করেন অধ্যাপক বাশার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় চারশ’ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে।
বিশ্ব পরিসরে ডেঙ্গুর এমন প্রভাব থাকলেও এর ভ্যাকসিন বা টিকা খুব একটা বিস্তার লাভ করেনি। ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ‘ডেঙ্গাভেক্সিয়া’ এবং ‘কিউডেঙ্গা’ নামে দুই ধরনের টিকা পৌঁছেছে মানুষের হাতে।
ফ্রান্সের বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান সানোফি-এ্যাভেন্টিজের ডেঙ্গু টিকা ‘ডেঙ্গাভেক্সিয়া’র অনুমোদন দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ।
তবে এর কোনোটিই ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। অর্থাৎ বাংলাদেশে ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের সুযোগ নেই। এর কারণ হিসেবে দুই ধরনের টিকারই নানা সীমাবদ্ধতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলছেন কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।



