মঙ্গলবার সকালেই হেমা মালিনী নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে ক্ষোভ উগরে দিয়ে লেখেন, “যা ঘটছে তা একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য! একজন মানুষ যখন চিকিৎসার প্রতি সাড়া দিচ্ছেন, তখন তাঁকে মৃত ঘোষণা করা শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, অমানবিকও বটে। সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে এমন আচরণ কেউ আশা করে না। অনুগ্রহ করে আমাদের পরিবারের গোপনীয়তা ও মানসিক অবস্থার প্রতি সম্মান দেখান।”
সোমবার রাত থেকেই গুজবে উত্তাল মুম্বইয়ের চলচ্চিত্রমহল। বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর মৃত্যু নিয়ে অসংখ্য খবরে ভরে যায় সোশ্যাল মিডিয়া। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে শোকবার্তা, মিম। অথচ বাস্তব একেবারে উল্টো— ৮৯ বছর বয়সি এই কিংবদন্তি অভিনেতা জীবিত আছেন, চিকিৎসাধীন এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি আপাতত স্থিতিশীল।
কিন্তু ততক্ষণে আগুন লেগে গেছে সংবাদমাধ্যম ও নেটপাড়ায়। একের পর এক চ্যানেল “ব্রেকিং নিউজ” চালাতে থাকে, কেউ বা পোস্ট করে দেন “রেস্ট ইন পিস ধর্মেন্দ্র”। যেকোনও পরিবারের জন্যই এটি দুঃসহ, আর সেই যন্ত্রণা আরও গভীর হয়ে ওঠে তাঁর স্ত্রী, অভিনেত্রী ও সাংসদ হেমা মালিনীর কাছে।
ধর্মেন্দ্র-হেমা কন্যা এষা দেওলও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ইনস্টাগ্রামে। তিনি লেখেন, “আমার বাবা স্থিতিশীল আছেন এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। যাচাই না করে কোনও খবর বিশ্বাস করবেন না। আমাদের গোপনীয়তার প্রয়োজনকে দয়া করে বুঝুন।”
তিনি আরও জানান, ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তাঁর বাবার চিকিৎসা চলছে, চিকিৎসকেরা আশাবাদী, এবং পরিবারের সদস্যরা পাশে রয়েছেন।
তবে গুজবের পরই সোমবার রাত থেকে ধর্মেন্দ্রর হাসপাতালের সামনে ভিড় জমতে থাকে। শাহরুখ খান, সলমন খান, আমিশা প্যাটেল প্রমুখ শিল্পীরা হাসপাতালে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। আর সেটিই যেন গুজবকে আরও উস্কে দেয়— বাইরে দাঁড়ানো ব্যারিকেড দেখে অনেকে নিশ্চিত হয়ে যান যে অভিনেতা মারা গেছেন।
আজ, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত খবর, ধর্মেন্দ্র চিকিৎসাধীন আছেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, “উনি প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন ভালভাবে, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন।” পরিবার আপাতত চাইছে, তাঁকে নিয়ে কোনও বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানো না হয়, যেন তিনি শান্ত পরিবেশে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
প্রসঙ্গত, আজ সকালে এএনআই. এনডিটিভি-সহ একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ধর্মেন্দ্রর মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছিল। এমনকি জাভেদ আখতার পর্যন্ত ধর্মেন্দ্রর উদ্দেশে শোকবার্তা লিখে ফেলেন এক্স হ্যান্ডেলে। সেই সব বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমে প্রকাশিত খবর সত্য বলে ধরে নিয়ে দ্য ওয়ালও সেই খবর প্রকাশিত করে ফেলে। তবে তার কিছু পরেই ধর্মেন্দ্র-কন্যা এষার বক্তব্যের পরে এএনআই-সহ বাকি সমস্ত সংবাদমাধ্যমই তাদের খবর ডিলিট করে দেয় বা বদলে দেয়। সেই মোতাবেক ‘দ্য ওয়াল’ও সেই খবরটি বাতিল করেছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের চিকিৎসক সূত্রের খবর, প্রবীণ অভিনেতাকে গত ১০ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
হেমা মালিনী অনুরোধ করেছেন, সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা যেন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন এবং এমন মিথ্যা তথ্য প্রচার না করেন যা জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে। তাঁর কথায়, “খবরের নামে কারও ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা কখনই সাংবাদিকতার দায়িত্ব নয়।”
এখনও পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরাগীদের কাছে অনুরোধ, ধর্মেন্দ্রর দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করতে এবং কোনও গুজবে কান না দিতে।



