একই দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে ধারণা থাকলেও গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ এখনও গণভোট সম্পর্কে কম সচেতন। এমন পরিস্থিতিতে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সংসদ নির্বাচনের প্রচারের সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করেছে ইসি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও জুলাই সনদের ওপর গণভোট আয়োজনের কথা জানান। ইতোমধ্যে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী একই দিনে দুই ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভোটের তফসিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন। একই দিনে গণভোটও হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের জন্য ইতোমধ্যে ইসিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মন্ত্রিপরিষদ থেকে ইসিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘একটা চিঠি এসেছে গত বৃহস্পতিবার। সেখানে বলা হয়েছে যে, গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় কথাটা বলা হয়েছে, গণভোট এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচন একই দিন হবে।’
এ পরিস্থিতিতে ইসির মূল চ্যালেঞ্জ হলো- ভোটারদের মধ্যে গণভোটের সচেতনতা সৃষ্টি করা। এজন্য কয়েকটি পরিকল্পনাও নিয়েছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- গণভোট বিষয়ক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার, বিটিভি ও অন্যান্য মাধ্যমে তা সম্প্রচার করা। সাংবাদিকদের জন্যও গণভোট বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার সঙ্গে সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা করা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভোটদান প্রক্রিয়া নিয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির টিভিসি, কাউন্টডাউন, স্লোগান, পথনাটক, র্যালি, বিজ্ঞাপন, লিফলেট ও পোস্টার তৈরি করে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার করবে ইসি।
এছাড়া এআই ও ফেইক নিউজ শনাক্তকরণ, গুজব প্রতিরোধে বিটিভির মাধ্যমে ফ্ল্যাশ নিউজ প্রচার, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়া নিয়েও ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে।
একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘আইন না হওয়া পর্যন্ত কমিশন এ বিষয়ে কাজ করতে পারবে না। আগামী সপ্তাহেই গণভোট আইনটি পাস করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইন পাস হলে, সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে। গণভোট হলে চারটি পয়েন্টেই হ্যাঁ/না ভোট হবে।’
গণভোট আয়োজনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘গণভোটের বিষয়টি আমাদের মাথায় আনতে হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছি না। ইসি আশাবাদী, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীরা সহযোগিতা করলে সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলেও কার্যকর প্রস্তুতি, লোকবল বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা সম্ভব।’



