অধ্যাদেশের ৩ ক্রমিকে গণভোটের প্রশ্ন বিষয়ে এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, গণভোটে একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করা হবে- ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’; (হ্যাঁ/ না):
(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার, সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা স্থানীয় সরকার প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।
(ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
অধ্যাদেশের ৪ ক্রমিকে ভোটকেন্দ্র বিষয়ে বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হবে, সেসব ভোটকেন্দ্রেই গণভোট অনুষ্ঠিত হইবে।
৫ ক্রমিকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ বিষয়ে বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কমিশন যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের নিয়োগ ও অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করবে, সেই রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবে।
৬ ক্রমিকে প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ বিষয়ে বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররা নিযুক্ত হবেন, সেই প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে নিযুক্ত হয়েছেন বলে গণ্য হবে।
প্রিসাইডিং অফিসার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে গণভোট গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দায়ী থাকবেন এবং তার মতে ভোটগ্রহণে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এরূপ ঘটনা সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসারকে অথবা সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করবেন।
সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রিসাইডিং অফিসারের সেসব ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন, যেসব ক্ষমতা ও দায়িত্ব কমিশন কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বা প্রিসাইডিং অফিসার তার ওপর অর্পণ করবেন।
যদি অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না থাকেন বা তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, তা হলে রিটার্নিং অফিসার অথবা সহকারী রিটার্নিং অফিসার সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রিসাইডিং অফিসারের স্থলে কাজ করার ক্ষমতা অর্পণ করবেন।
ভোটগ্রহণ চলাকালীন যেকোনো সময় সহকারী রিটার্নিং অফিসার, কারণ লিপিবদ্ধ করে, যে কোনো প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার অথবা পোলিং অফিসারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবেন এবং সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত অফিসারের দায়িত্ব পালনের জন্য তার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
৭ ক্রমিকে ভোটার তালিকা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা হবে গণভোটের ভোটার তালিকা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সহকারী রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে সরবরাহকৃত প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটদানের অধিকারী ভোটারদের নাম সংবলিত ভোটার তালিকা গণভোটের ভোটার তালিকা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
৮ ক্রমিকে গণভোট গ্রহণের সময় বিষয়ে বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় হবে গণভোটের ভোটগ্রহণের সময়।
৯ ক্রমিকে মুলতবি ভোটগ্রহণ বলা হয়েছে। যদি প্রিসাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোনো কারণে ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত বা ব্যাহত হয়, তাহলে তিনি ভোটগ্রহণ স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারবেন, এবং তৎসম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে অনতিবিলম্বে জানাবেন।
যে ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার অনতিবিলম্বে তৎসংক্রান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবেন।
কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের ফলাফলের মাধ্যমে গণভোটের ফলাফল নির্ধারণ সম্ভব নয়, তাহলে কমিশন উক্ত ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেবে।
কমিশন কোনো ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিলে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার যথাশিগগির সম্ভব ভোটগ্রহণের তারিখ, স্থান ও সময় নির্ধারণ করে একটি গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন।
১০ ক্রমিকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট গ্রহণ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং উল্লিখিত প্রশ্নটিতে জনমত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে কমিশন নির্ধারিত একক ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যেক ভোটার ভোট দেবেন। গণভোটের ব্যালট ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট থেকে পৃথক ও ভিন্ন রঙের হবে।
ব্যালট বাক্স বিষয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত, নির্ধারিত এবং সরবরাহকৃত ব্যালট বাক্স ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহার করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরবরাহকৃত একই ব্যালট বাক্স গণভোটের ব্যালট বাক্স হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিতে পারবে। রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার প্রত্যেক প্রিসাইডিং অফিসারকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যালট বাক্স সরবরাহ করবেন।