‘মেগাথার্স্ট’ ফল্ট থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির আশঙ্কা, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
মোহনা অনলাইন
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় থাকা ‘মেগাথার্স্ট’ ফল্ট থেকে ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে এমন সতর্ক বার্তা দিয়েছেন দেশি-বিদেশি ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে অনুষ্ঠিত ‘আর্থকুয়েক অ্যাওয়ারনেস, সেফটি প্রটোকল অ্যান্ড ইমার্জেন্সি প্রিপারেডনেস’ শীর্ষক সেমিনারে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেমিনারটি আয়োজন করে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ, স্থপতি, প্রকৌশলী, রিয়েল এস্টেট উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। বক্তারা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬ সালের একটি গবেষণা তুলে ধরে বলেন, গত ৮০০ থেকে ১০০০ বছরের মধ্যে সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাবডাকশন জোনে সঞ্চিত শক্তি এখনো মুক্ত হয়নি যা পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের অন্যতম প্রধান পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচিত হয়। ওই গবেষণায় গঙ্গা–ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মেগাথার্স্ট ফল্ট থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল।
সেমিনারে জানানো হয়, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশে ২০০টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে এবং ২০২৪ সালের পর থেকে কম্পনের হার আরও বেড়েছে। দেশের ভৌগোলিক অবস্থানও ভূমিকম্প ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ভারত, মিয়ানমার ও ইউরেশীয় এই তিন সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশ তিনটি বড় ফল্ট লাইনে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেটের ডাউকি ফল্ট, চট্টগ্রাম-টেকনাফের চিটাগং-আরাকান ফল্ট এবং মিয়ানমারের সাগাইং ফল্টকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্প অঞ্চলের তালিকায় রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্রুত নগরায়ণ, ঘনবসতি, সংকীর্ণ সড়ক, বিল্ডিং কোড উপেক্ষা এবং দুর্বল ভবন কাঠামো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, যথাযথ প্রস্তুতি ও সচেতনতা বাড়ানো হলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে দেশ। এসময় ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনগুলোর স্ট্রাকচারাল অডিট, নির্মাণকাজে মান নিয়ন্ত্রণ, জরুরি উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর প্রাথমিক সতর্কবার্তা ব্যবস্থা চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে নিয়মিত ড্রিল, সচেতনতা কার্যক্রম এবং পরিবারভিত্তিক জরুরি প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন জাপানের ভূমিকম্প-সহনশীল স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ কেসিরো সাকো ও হেসাইয়ে সুগিয়ামা। তারা জাপানের ভূমিকম্প-পরবর্তী অভিজ্ঞতা এবং নিরাপদ নির্মাণমান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন।
স্বাগত বক্তব্যে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক কয়েক দফা ভূমিকম্প ঢাকার ঝুঁকির বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দ্রুত নগরায়ণ ও দুর্বল ভবন কাঠামোর কারণে বড় কোনো ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। রাষ্ট্র, আবাসন খাত ও সাধারণ মানুষ এই তিনটি স্তম্ভ সমন্বিতভাবে শক্তিশালী করতে পারলেই ঝুঁকি মোকাবিলা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন প্রফেসর ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া, প্রফেসর ড. সৈয়দ ফখরুল আমিন (বুয়েট), রিহ্যাব সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল হোসেন চৌধুরী রিজভী, প্রফেসর ড. রাকিব আহসান (বুয়েট), বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান, বিএমইডির পরিচালক মমিনুল ইসলাম, স্থপতি আরিফুল ইসলাম, স্থপতি রফিক আজম ও ভিস্তারার এমডি মুস্তফা খালিদ পলাশ।



