কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিজ নির্বাচনী এলাকায় দিনভর গণসংযোগ ও পদযাত্রা শেষে ফেসবুকে এক আবেগঘন ও আত্ম-সমালোচনামূলক পোস্ট দিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ভানী এবং সুলতানপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পদযাত্রা শেষে রাতে তিনি এই পোস্ট করেন,
যেখানে ব্যক্তিগত শোক, রাজনৈতিক কর্মীদের ভবিষ্যৎ এবং রাজনীতিকদের ভূমিকা নিয়ে গভীর দার্শনিক ভাবনা উঠে এসেছে।
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার স্বর্গীয়া মায়ের প্রতি গভীর ঋণ স্বীকার করে শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি লেখেন, “মুরগিকে ঘিরে মুরগি-ছানাদের যেরূপ বৈভবহীন পৃথিবীর আবর্তন, আমার সঙ্গে আমার মায়ের সম্পর্কটা ছিল ঠিক সে রকম।”
মায়ের জন্য তার একটি বাড়ি করে দেওয়ার অপূর্ণ স্বপ্নের কথাও তুলে ধরেন তিনি। ‘জুলাই’ মাসের প্রতীকী ব্যবহার করে তিনি লেখেন, “ঠিক তেমনই জুলাই আমার আর আমার মায়ের মাঝে এক অদৃশ্য দূরত্ব টেনে দিয়েছে… আম্মার জন্য আর কখনো বাড়ি করা হবে বলে মনে হয় না।” তবে এই দুঃখবোধের পাশাপাশি তিনি একধরনের পরিতৃপ্তিও খুঁজে পান, যখন নির্বাচনী এলাকার মায়েরা তার কাছে নানা আবদার নিয়ে আসেন। এই ‘সাময়িক নির্ভার অনুভূতি’কে তিনি অনিশ্চয়তার শেষ স্টেশন থেকে নিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাত্রার সূচনা বলে মনে করেন।
তবে পোস্টের শেষাংশে এসে তিনি রাজনীতির কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, “আমি অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছি।” এই অনিশ্চয়তার মাঝে তিনি তার কর্মীদের—যাদেরকে তিনি “বেকার, আধাবেকার, ভবঘুরে, অর্ধশিক্ষিত, উদ্যোমী তরুণ” হিসেবে উল্লেখ করেন—তাদের পতঙ্গের মতো চারপাশে ঘুরে বেড়ানো দেখছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিজের পেশা নিয়ে তার আত্ম-সমালোচনা। তিনি সরাসরি নিজেরাসহ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে লেখেন,
“দেখছি আমাদের মতো জালিয়াত, ঠক, রাজনীতিবিদ, যাদের কাছে সহকর্মীর মৃত্যু হলো রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ, তাদেরকে দেখার জন্য… এসব উদ্যোমী তরুণরা পতঙ্গের মতো চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” হাসনাত আব্দুল্লাহ সবশেষে আশা প্রকাশ করেন, যেন আর কোনো জুলাই এই তরুণদের তাদের মায়ের কাছ থেকে দূরে নিয়ে না যায় এবং এই তরুণ কর্মীরা যেন তাদের মায়েদের জন্য ‘বৃষ্টিস্নিগ্ধ বাড়ি’ করে দিতে পারে, যেখানে মায়েরা মমতার শেষ আলোয় ভেজা, নিশ্চিন্ত ও শান্ত গোধূলিবেলা ফিরে পাবেন।