প্রযুক্তিনির্ভর পরিবহন ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে মেট্রোরেল
নাসির উদ্দিন
আগামীকাল চালু হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। বিজয়ের মাসেই মেগা প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিনির্ভর পরিবহন ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এ মেট্রোরেল। যা রাজধানীর নাগরিক যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে মেট্রোরেল ব্যবস্থার যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। করোনা অতিমারি, হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে দেশের বড় এ প্রকল্পটি।
২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে মনযোগ দেয় বর্তমান সরকার। চার বছর পর আসে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একনেক সভায় অনুমোদন পায় প্রকল্পটি।
গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপো স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামোর কাজ।
নির্মাণ মহাযজ্ঞ শেষে এখন বাণিজ্যিক চলাচলের দ্বারপ্রান্তে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো অংশের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক এক কিলোমিটার। প্রথম পর্বে চালু হবে আগারগাঁও পর্যন্ত। যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭-৩ কিলোমিটার। উত্তরায় তিনটিসহ পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও মিলিয়ে এ পথে মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি।
এমআরটি লাইন সিক্সে চলাচল করবে মোট ২৪ জোড়া ট্রেন। তবে শুরুর দিকে অর্থাৎ আগারগাঁও অংশের জন্য প্রস্তুত আছে ১২ জোড়া। এরমধ্যে নিয়মিত চলাচল করবে দশ জোড়া। বাকি দু’টি স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। মেট্রোরেল সম্পর্কে যাত্রীদের অভ্যস্ত করতে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা ধীরে ট্রেন চালানো হবে। পুরোদমে চালুর পর প্রতি চার মিনিটে ছাড়বে একটি করে ট্রেন। দুই হাজার ৩০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে মেট্রোরেল।
মেট্রোরেল পরিচালনায় ব্যবহার করা হবে জাপানী প্রযুক্তি। থাকবে, মুভিং ব্লক কমিউনেকশন বেজড টেলি-কন্ট্রোল এবং অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন সিস্টেম। বিশেষ ধরণের ইনভার্টার সিস্টেমে চালিত এ ট্রেন অনেক কম শব্দ তৈরি করবে, যা শব্দদূষণের পর্যায়ে পড়ে না।
কিলোমিটার প্রতি মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরার প্রথম স্ট্শেন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া, ৬০ টাকা। মতিঝিল পর্যন্ত চালুর পর পুরো রুটের জন্য যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হবে একশ টাকা।
জাপান সরকারের অর্থায়নে স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড,ডিএমটিসিএল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ছিলো ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে কমলাপুর পর্যন্ত সোয়া কিলোমিটার দূরত্ব বাড়ানো হয়। ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটিতে। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগি সংস্থা জাইকার ঋণ ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বাকিটা খরচ হবে সরকারের তহবিল থেকে।