সমাজসেবা কর্তৃক মৃত ছাহেরা বলছেন আমি মরিনাই! কেন আমার ভাতা বন্ধ
হাফিজুল নিলু, নড়াইল প্রতিনিধি
স্বামী মারা গেছেন, তাই বিধবা ভাতা তুলছেন স্ত্রী ছাহেরা বেগম (৯০)। কিন্তু তিনি জীবিত থাকলেও হঠাৎ ভাতা বন্ধ হয়ে যায় ১ বছর। সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নাম মৃতদের তালিকায়। এ কারণে ওই নারীর বিধবা ভাতা
বন্ধ হয়ে গেছে।
১বছর ভাতার টাকা না পেয়ে তিনি কালিয়া সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি ‘মৃত্যুবরণ’ করেছেন। তাই ভাতা বাতিল করেছে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা ভাতা তুলতে গিয়ে নিজেকে মৃত জানতে পেরে হতবাক হয়ে পড়েন ওই বিধবা। তিনি কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছাহেরা বেগম। তার ভাতা ব্যাংক হিসাব নম্বর ১২২।
এ বিষয়ে ছাহেরা বেগম বলেন, আমি মরি নাই। কেন আমার ভাতা বন্ধ। দীর্ঘদিন আমার স্বামী মারা গেছেন। অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের বড় করে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে খুলনাতে থাকে তার বাচ্চাদের নিয়ে। আমাকে দেখেনা। ২০০৫ সালে
পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার তারা অবস্থা দেখে একটা বিধবা ভাতার কার্ড করে দেন। ওই টাকা দিয়েই দুইবেলা কোনোমতে খাবার জোগাড় হতো। বিধবা ভাতার কার্ডধারী হিসেবে ছয় মাস পর পর ভাতা উত্তোলন করে আসছি।
সে অনুযায়ী গত ১বছর ভাতা মোবাইলের বিকাশে না আশায় জানতে পারি আমি মৃতদের তালিকায়। তাই ভাতা বন্ধ। এতে বেশ হয়রানির শিকার হচ্ছি।
জানা গেছে, কালিয়া সমাজসেবা অফিসের পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন সমাজকর্মী মোঃ তরিকুল ইসলাম কোনো প্রকার কাগজপত্র ছাড়া ও ছাহেরা বেগমের ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক মৃত সনদ ছাড়া তার নাম বিধবা ভাতার তালিকা থেকে কেটে অন্য এক বিধবা মহিলার নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।
এ বিষয়ে সমাজকর্মী মোঃতরিকুলের কাছে জীবিত ছাহেরাকে মৃত দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,মৃত সনদ পাওয়ার পরে নাম কাটা হয়েছে। মৃত সনদ দেখাতে বললে তিনি ২ দিনের সময় নেন। ২ দিন পরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছাহেরা বেগমের মৃত সনদ দেখাতে ব্যার্থ হন। এবং ভুল করে নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষমা চান। এবং জীবিত ছাহেরা বেগমের ভাতার তালিকায় পুনরায় নাম অন্তভূক্ত করে দিবেন বলে জানান।
এ দিকে খোজ নিয়ে জানা যায় পাহরডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ড সরসপুর গ্রামের মৃত আবু তালেব শেখের স্ত্রী সায়রা খাতুন নামের আরেকজন ভাতাভোগী রয়েছে। তিনি গত বছরে ২৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিনি মারা গেলেও তার নাম
ভাতার তালিকায় রয়ে গেছে এবং টাকা পাচ্ছে তার স্বজনরা।
সরসপুরের সাহেরা বেগমের মৃত্যুর ১৩ মাস অতিবাহিত হলেও তার মৃত সনদ পায়নি সমাজসেবা অধিদপ্তর। বন্ধ হয়নি ভাতা।
এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম অভিযুক্ত সমাজকর্মী তরিকুলের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
তিনি আরোও বলেন, আমি বিষয়টি জেনে ছুটিতে থাকা অবস্থায় ভুক্তভোগীর ভাতা চালু করে দিয়েছি এবং বকেয়া টাকাও ফেরত দেওয়া ব্যবস্থা করছি।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনু সাহা মোহনা টিভি অনলাইনকে বলেন, বিষয়টি সমাজ সেবা অফিসারের সাথে তিনি কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে অবগত করা হলে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। ৯০ বছরের বৃদ্ধার ভাতা বন্ধ কেন করা হলো সেটার জবাব চাওয়া হবে। এবং ছেলে কেন মায়ের খোজ খবর নেননা তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।