বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদলিপি

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত চেয়ে বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত ২৮শে আগস্ট ২০২৩ তারিখে বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের সম্মানিত সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর এমন অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকে। কাজেই এ ধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন বলে আমরা মনে করি আরও উদ্বেগের সাথে লক্ষণীয় যে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী হলেও শ্রমিকদের মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চুপ থেকেছেন। এ ধরনের বিবৃতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর সম্পূর্ণ পরিপন্থী ।

শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ২৩৪ অনুযায়ী গ্রামীন টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারি কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং ধারা ৪(৭) ও ৪(৮) অনুযায়ী শ্রমিকদের চাকুরিতে স্থায়ী না করার অভিযোগ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণই। অধিকন্তু অন্য একটি মামলায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের জানা মতে খোলাচিঠিতে যে সকল সম্মানিত ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে, তাদের দেশেও শ্রমিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানকে সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাছাড়া একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ কোনভাবেই মেনে নেবে না। এ-ধরনের বিবৃতির পেছনে গোপন কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button