আন্তর্জাতিক

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনায় যা যা থাকছে

মোহনা অনলাইন

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। যেখানে অংশ নেবেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও শক্তিধর দেশগুলোর নেতারা। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না।

জি-২০-র সদস্য হিসেবে এবারই প্রথমবারের মতো শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছে ভারত। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে ফুল ও ঝরনার মতো নানা অনুষঙ্গে সাজানো হয়েছে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিকে। রঙে-রঙে রাঙানো হয়েছে সরকারি ভবন ও রাস্তাঘাট।

সেই সঙ্গে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর ১ লাখ ৩০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি দিল্লির বানরের দলগুলোকে তাড়াতে নামানো হয়েছে প্রশিক্ষিত লেঙ্গুর।

জি-২০ হলো একটি কৌশলগত বহুপাক্ষিক সংগঠন, যা বিশ্বের প্রধান উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো নিয়ে গঠিত। জি-২০-র পূর্ণরূপ হলো গ্রুপ অব টোয়েন্টি। যার সদস্য ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। ওই সংকট থেকে বিশ্বনেতারা উপলব্ধি করেন যে, এ ধরনের সংকট আর একটি দেশের সীমানার মধ্যে আটকে রাখা যাবে না এবং সংকট মোকাবিলায় আরও উন্নত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

সেই উপলব্ধি থেকে বিশ্বের প্রভাবশালী ১৯টি দেশ ও একটি রাজনৈতিক সংগঠন মিলে একটি অর্থনৈতিক জোট গড়ে তোলে, যা বর্তমানে জি-২০ নামে পরিচিত। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮০ শতাংশই জি-২০ জোটের দখলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে এই জোটের দেশগুলো।

জি-২০ গঠনের পর শুরুর বছরগুলোতে শুধু সদস্যদেশগুলোর অর্থ বিভাগের প্রধানরাই সম্মেলনে যোগ দিতেন। তবে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর সিদ্ধান্ত হয়, জোটের সদস্যদেশগুলোর নেতারা প্রতিবছর শীর্ষ সম্মেলনে বসবেন।

জোটের সব সদস্যই এবারের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শ্রম সংস্থা, ফিন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি বোর্ড, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা–এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রধানরাও অংশ নেবেন এই শীর্ষ সম্মেলনে।

পাশাপাশি অংশ নেবেন আফ্রিকান ইউনিয়ন, আশিয়ান, আফ্রিকান ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর প্রধানরাও। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সৌর জোট, কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক–এই সংস্থাগুলোকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। তার জায়গায় নয়াদিল্লি আসছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। আসছেন না চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও। তার প্রতিনিধিত্ব করবেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।

জি-২০-র এবারের সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছে ভারত। এটা জোটের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন। এ বছর সম্মেলনে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুগুলো হলো: বহুপক্ষীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও ঋণের ব্যবস্থা করা, আন্তর্জাতিক ঋণকাঠামোর সংস্কার, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে নীতিমালা তৈরি এবং খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব।

তবে এ নিয়ে এখনও কোনো যৌথ বিবৃতি দিতে পারেনি জোটের দেশগুলো। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানের কারণে গভীরভাবে বিভক্ত তারা। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর জন্য মস্কোকে দোষারোপ করার বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীন। অন্যদিকে যুদ্ধের জন্য মস্কোর প্রতি কঠোর নিন্দা জানানোকে যৌথ বিবৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও কানাডাসহ পশ্চিমা বিশ্ব।

ভারতে অনুষ্ঠেয় এবারের জি-২০ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘বাসুদেইভা কুটুমবাকাম’। সংস্কৃত এ শব্দগুচ্ছের অর্থ ‘পুরো বিশ্ব একটি পরিবার’। চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর ব্রাজিলের কাছে জি-২০-র সভাপতিত্ব হস্তান্তর করবে ভারত। সেই হিসাবে আগামী বছর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button