ভারতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী জি-২০ সম্মেলন। এতে অংশ নিতে এরই মধ্যে নয়াদিল্লিতে হাজির হয়েছেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে ভারত। দিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপমে আয়োজিত হচ্ছে এই সম্মেলন। বলা হচ্ছে যে, গোটা বিশ্বই যেন ভারতে হাজির হয়েছে। এর আগে ভারত এত বড় কোনো সম্মেলনের আয়োজন করেনি।
এরই মধ্যে ভারতে পৌঁছেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ বিশ্বের তাবড় নেতারা। যদিও এতে এবার অংশ নিচ্ছেন না চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তাদের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
এবারের জি ২০ সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। তবে এতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে এবারের সম্মেলন নিয়ে অনেক সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এ জোটের।
সম্মেলন উপলক্ষে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে নয়াদিল্লিকে। নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে নামানো হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য। নিরাপত্তার খাতিরে রয়েছে ড্রোন-বিরোধী ব্যবস্থা। দিল্লির বানরের দলগুলোকে ঠেকাতেও নেওয়া হয়েছে অভিনব সব কৌশল।
এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন-২০২৩ যে থিমের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা হলো বসুধৈব কুটুম্বকম (এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ)। মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীবসহ সব জীবনের মূল্য ও পৃথিবী ও বিস্তৃত গ্রহে তাদের আন্তঃসম্পর্ককে কেন্দ্র করে এজেন্ডটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর আলোচনার পরিসর বেড়েছে। তাদের আলোচ্য সূচি শুধু অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই জ্বালানি, আন্তর্জাতিক ঋণ মওকুফ এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর করদানের মতো বিষয়ও আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে।
জি-২০ আসলে কী?
জি-২০ বা গ্রুপ অব টুয়েন্টি হচ্ছে কতগুলো দেশের একটি ক্লাব যারা বিশ্ব অর্থনীতির বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য আলোচনা করতে বৈঠক করে। জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর আওতায় বিশ্ব অর্থনীতির ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনগণও রয়েছে এসব দেশে। জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি দেশ মিলে আবার জি ৭ গঠন করেছে।
এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরো ১৯টি দেশ। এসব দেশ হচ্ছে – আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সউদী আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। স্পেন সব সময়ই অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ পায়।
কিছু বিতর্কের বিষয়ও আছে :
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের বিষয়টি দিল্লি সম্মেলনে বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের মার্চে জি২০ ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কোন চুক্তিতে সম্মত হতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে তীব্র বিতর্কের কারণে।
২০২২ সালের নভেম্বরে বালিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের বেশিরভাগ জুড়ে ছিল ইউক্রেনের সাথে পোল্যান্ডের সীমান্তের ভেতর পড়া যুদ্ধে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র সংকট নিয়ে আলোচনা। মে মাসে চীন এবং সউদী আরব ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে অনুষ্ঠিত পর্যটন নিয়ে জি২০ সম্মেলন বয়কট করে। কারণ কাশ্মির ভারত ও পাকিস্তান-দুই দেশই তাদের নিজেদের ভূ-খণ্ডের অংশ বলে দাবি করে।
ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত বিতর্কও এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করেছিল যখন চীন অরুণাচল প্রদেশ এবং আকসাই চিন উপত্যকা তাদের নিজেদের ভূখণ্ড উল্লেখ করে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিল।
ভারতের জন্য সম্মেলনের গুরুত্ব কতটা?
সম্প্রতি গত কয়েক বছরে নিজেকে গ্লোবাল সাউথভুক্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে ভারত। আর জি-২০কে দেখা হচ্ছে তাদের এই আওয়াজ আরও বড় অঙ্গনে তুলে ধরার সুযোগ হিসেবে।
ভারতের ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আগে শীর্ষ এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে এটি বিশ্বে নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিকে শক্তিশালী করবে। দিল্লিতে এই সম্মেলনকে সামনে রেখে এর আগে ভারতের ৫০টি শহরে শত শত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাসের পর মাস ধরে শহরগুলোতে জি-২০ লোগো এবং মোদীর ছবি সম্বলিত উজ্জ্বল বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। বিশ্বকে ভারতে নিয়ে আসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা হিসেবে এই অনুষ্ঠানকে দেখা হচ্ছে।
মোদিও জি-২০ ভুক্ত অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়ন করেছেন বিশেষ করে গত জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাকে একটি উষ্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।
চলমান জটিল বহু-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই সম্মেলনে ভারতের জন্য একটি স্বস্তি-দায়ক হাওয়া আনবে বলে মনে হচ্ছে না। অনেক অর্থনীতি এখনো মহামারির থাবা থেকে বেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা যুদ্ধ এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে ক্রমে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। কারণ বিশ্বজুড়েই খাদ্য এবং জ্বালানির দাম বেড়েছে।
সূত্র: বিবিসি