আন্তর্জাতিক

ভূমিকম্পে নিহতের স্মরণে শোক পালন করছে মরক্কো: মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে

মোহনা অনলাইন

মরক্কো রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিধ্বংসী ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে শোক পালন করছে। ভূমিকম্পে দুই হাজার জনেরও বেশি লোক মারা গেছে। উদ্ধারকারী দল ধসে যাওয়া গ্রামগুলোতে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকে থাকা জীবিতদের খুঁজে বের করার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কমপক্ষে দুই হাজার ১২ জন নিহত এবং দুই হাজার ৫৯ জনের বেশি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি মারাকেশের পর্যটন কেন্দ্রের ৭২ কিলোমিটার (৪৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে আঘাত হানা ৬.৮-মাত্রার ভূমিকম্পটি প্রত্যন্ত এলাকার পুরো গ্রামগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

মৌলে ব্রাহিমের পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা লাহসেন বলেন, ‘আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি।’ তিনি তার স্ত্রী এবং চার সন্তানকে হারিয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা লাহচেনের তিন কন্যার মৃতদেহ তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু এখনও তার স্ত্রী ও ছেলের মৃতদেহ খুঁজে পায়নি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কিছুই করতে পারি না। আমি কেবল পৃথিবী থেকে দূরে সরে যেতে চাই এবং শোক করতে চাই।’

সৈন্য এবং জরুরী পরিষেবাগুলো দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে পৌঁছানোর জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের এখনও আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আল-হাউজ প্রদেশ, যেখানে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল, সেখানে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ২৯৩ জন মারা গেছে, তারপরে তারউদান্ত প্রদেশে ৪৫২ জন মারা গেছে।

প্রত্যন্ত মৌলে ব্রাহিম গ্রামের আরেক বাসিন্দা বাউচরা স্কার্ফ দিয়ে তার চোখের জল মুছতেছিলেন, যখন তিনি লোকদের কবর খনন করতে দেখেছিলেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাইয়ের নাতি-নাতনি মারা গেছে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা সরাসরি দেখেছি এবং আমি এখনও কাঁপছি। এটি একটি আগুনের বল যা তার পথের সবকিছু গ্রাস করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে প্রত্যেকেই পরিবার হারিয়েছে, তা আমাদের গ্রামে হোক বা অঞ্চলের অন্য কোথাও।’

কর্তৃপক্ষ তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। ইসরায়েল, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিবেশী আলজেরিয়ার সঙ্গে মরোক্কোর শীতল সম্পর্ক চলছে। তবে এই বিপর্যয়ে মানবিক সহায়তা এবং আহতদের বহনকারী ফ্লাইটগুলোর জন্য দেশটি তার আকাশসীমা খুলে দিয়েছে, যা দুই বছর ধরে বন্ধ ছিল।

রেড ক্রস সতর্ক করেছে যে, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। সংস্থার মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার পরিচালক হোসাম এলশারকাউই এক বিবৃতিতে বলেছেন,‘ এটি এক বা দুই সপ্তাহের ব্যাপার হবে না, আমরা এমন একটি প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছি যা বছর না হলেও কয়েক মাস সময় নেবে।’

এএফপি’র  সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, মারাকেশের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে তাফেঘাঘতে গ্রামটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে খুব কম ভবনই এখন দাঁড়িয়ে আছে।

শনিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বলেছে, ‘সরকারি কর্তৃপক্ষ উদ্ধার তৎপরতা ত্বরান্বিত করতে এবং আহতদের সরিয়ে নেয়ার জন্য এখনও সক্রিয় রয়েছে’।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button