হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের ২ বছর করে কারদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এ রায় দেন। সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নজরুল ইসলাম। রায় ঘোষণার পর অধিকারের আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ মামলায় গত ২৪ আগস্ট শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। তবে সেদিন আদালত রায় ঘোষণা করেননি। রায় ঘোষণার জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সাজা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে। আর আদিলুর রহমানের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভূঁইয়া প্রথম আলো বলেন, বিচারিক আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাননি আদিলুর রহমান ও নাসির উদ্দিন। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
বিকৃত তথ্য প্রচারের মামলায় অধিকারের আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির উদ্দিন ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন।
পাশাপাশি তাঁরা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করেন, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও (২) ধারায় অপরাধ। আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালান, যা দণ্ডবিধির ৫০৫ ‘সি’ ও ‘ডি’ এবং ৫০৫ ‘এ’ ধারায় অপরাধ।
ওই মামলায় ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।