জাতীয়শিক্ষা

এটিইও পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে

এখন থেকে সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে হবে। বাকি ২০ শতাংশ পদে নিয়োগ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে হবে। এছাড়া নির্ধারিত যোগ্যতাসাপেক্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন পদে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

নতুন করে করা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালায় (২০২৩) শিক্ষকদের ওপরের পদে যাওয়ার সুযোগ বাড়ানোর এসব বিধান রাখা হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর বিধিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

এত দিন এটিইও পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ৫০ শতাংশ পদ শিক্ষকদের মাধ্যমে পূরণের সুযোগ ছিল। বাকি ৫০ শতাংশ নিয়োগ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে হতো।

প্রাথমিকের শিক্ষকেরা বলছেন, এটিইওর ৮০ শতাংশ পদ শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে এই পদের নিয়োগ পরীক্ষা শুধু শিক্ষকদের জন্যই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। তা না হলে শিক্ষকদের অনেকেই এই সুযোগ পাবেন না। কারণ, নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা যাবে। এ বিষয়কেই জটিলতা হিসেবে দেখছেন শিক্ষকেরা। এছাড়া নতুন নিয়োগ বিধিমালায় শিক্ষকদের বয়সসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আপত্তি আছে।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক রকমের অংশীজন আছে। তাই কোনো বিষয়ে সবাই শতভাগ সন্তুষ্ট হয় না। কিন্তু এই বিধিমালার মাধ্যমে সব অংশীজনদের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।

বর্তমানে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি। এর মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ৫ লাখের বেশি। আর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশই নারী।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হয়। ১৯৮৫ সালে একবার নিয়োগবিধি হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে হয় আরেকবার। ২০০৩ সালে এই নিয়োগবিধি কিছুটা সংশোধন করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে জটিলতা ছিল। এমন অবস্থায় নতুন করে নিয়োগ বিধিমালা করল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সাধারণত এটিইও পদে নিয়োগে প্রার্থীর বয়স ৩০ বছর পর্যন্ত। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের (শিক্ষক) ক্ষেত্রে এই বয়স ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য হবে। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে এই পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ আছে।

নতুন নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) পদে ৫০ শতাংশ পদ পূরণ হবে পদোন্নতির মাধ্যমে। আগে প্রধান শিক্ষকেরা বিভাগীয় প্রার্থী (৫০ শতাংশ) হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে এই পদে যাওয়ার সুযোগ পেতেন। এখন তা হবে পদোন্নতির মাধ্যমে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী গবেষণা কর্মকর্তা বা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদে কমপক্ষে পাঁচ বছরের চাকরি করতে হবে। অর্থাৎ যে শিক্ষক সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা হবেন, তাঁদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পাবেন।

পদোন্নতির মাধ্যমে উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তারা (জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে) সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বা শিক্ষা কর্মকর্তা হতে পারবেন। এই সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বা শিক্ষা কর্মকর্তারা আবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে চাকরির নির্ধারিত অভিজ্ঞতা লাগবে।

পদোন্নতির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক, এমনকি পরিচালক হওয়ারও সুযোগ আছে নতুন নিয়োগ বিধিমালায়। এভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন অন্যান্য পদে নিয়োগের বিষয়টিও এ বিধিমালায় উল্লেখ আছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button