পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এছাড়া বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। যদিও সরকারি তথ্যের সঙ্গে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ফারাক রয়েছে বিস্তর।
এখন রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা এড়িয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকেরা প্রতিটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য দপ্তরে যোগাযোগ করে জেনে নিচ্ছেন ডেঙ্গুর পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে মৃত ও আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তাই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, এই রাজ্যে এ বছর এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৪৩ জন। তবে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে ডেঙ্গুতে এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই রাজ্যে আরও চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন করে কলকাতা ও সল্টলেক এবং অন্য দুজন মারা গেছেন খড়গপুর ও ঘাটালে। কলকাতায় মারা গেছেন কল্পনা দত্ত (৭৮) ও সল্টলেকে পিনাক সরকার (৬৬)। তবে সংক্রমণের নিরিখে এখনো রাজ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। এরপরই কলকাতা পৌর এলাকা।
বৃহস্পতিবার কলকাতা পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত পৌর এলাকায় ৩ হাজার ৮০২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর গত দুই সপ্তাহে কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১০০ জন। আর সল্টলেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৬৪ জন। তবে সল্টলেকে মৃত্যুর ঘটনা প্রথম ঘটেছে শুক্রবার।
ডেঙ্গুর অবস্থা দেখার জন্য কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নির্দেশ দিয়েছেন বাড়ির আশপাশের জমা পানি সরিয়ে ফেলতে হবে। ঝোপঝাড় কেটে ফেলতে হবে। পৌরবাসীকে ডেঙ্গু নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
তবে এখনো রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় জমছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর। এরপর অভিযোগ রয়েছে সরকারি হাসপাতালে শয্যা না পাওয়ার।
সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তরের সাপ্তাহিক পর্যালোচনা বৈঠকে উঠে এসেছে ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ। বলা হয়েছে, রাজ্যে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৩৭ জন। ১৩ সেপ্টেম্বর এই সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৬৭। অর্থাৎ এক সপ্তাহে বেড়েছে ৭ হাজার ৬৭০ জন। আর আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উত্তর ২৪ পরগনায়। উত্তর ২৪ পরগনায় ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৩৫, কলকাতায় ৪ হাজার ৪২৭, মুর্শিদাবাদে ৪ হাজার ২৬৬, নদীয়ায় ৪ হাজার ২৩৩, হুগলিতে ৩ হাজার ৮৩, হাওড়ায় ১ হাজার ৮৩৩, ঝাড়গ্রামে ১ হাজার ৩৬৩ এবং মালদহে ১ হাজার ৩৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর ডেঙ্গু নিয়ে এখন রাজ্যের সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে বিরোধীরা দাবি তুলেছে, রাজ্য সরকার ডেঙ্গুর সঠিক পরিসংখ্যান দিক। তারা বলছে, দেশের মধ্যে এখন ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্ত ব্যক্তির নিরিখে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু রাজ্য সরকার তা স্বীকার করছে না।