গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্য নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) পুরো বিকেল জুরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের খানেপুর ইছামতী নদীতে হেঁইয়ো হেঁইয়ো ধ্বনি ও টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। খানেপুর গ্রামবাসীর উদ্যেগে এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ বেপারীর এবং সঞ্চালনা করেন আয়েজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজল আহমেদ। দুটি করে নৌকার টান হয়। প্রতিটি নৌকা সমান গতিতে টেনে আসে। এতো কমপিটিশনের বাইচ ইতোপূর্বে খুব কমই হয়েছে। নৌকা বাইচ দেখে দর্শকরা খুব উৎফুল্ল প্রকাশ করেছেন দর্শকরা। নৌকা বাইচে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আগলার লিটন-২ এবং রানার্সআপ হয়েছে হাসনাবাদের সুলতানা এক্সপ্রেস। পরে চ্যাম্পিয়ন নৌকাকে মোটরসাইকেল এবং রানার্সআপকে ফ্রিজ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুন এবং উদ্ধোধক ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানূর রহমান ভূইয়া কিসমত। বিশেষ অতিথি ছিলেন দোহার সার্কেলের এএসপি আশরাফুল আলম, নবাবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ, নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর মেডিকেল অফিসার ডা. হরগোবিন্দ সরকার অনুপ।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, আমাদের এই ক্রীড়া সংগঠন দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় যেসব স্থানে আগে নৌকা বাইচ হতো। কিন্তু এখন নানা কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব এলাকার আয়োজকদের বাইচ আয়োজনে উদ্বুদ্ধ করি। তিনি বলেন, বাইচ আয়োজন এখন অনেক ব্যয় বহুল। সরকারের পক্ষ থেকে ফুটবল, ক্রিকেট খেলার আয়োজন করলেও নৌকা বাইচ আয়োজনও করা হয় না। এমনকি কোনো সহযোগিতাও করে না। তবে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এখনো নৌকা বাইচ আয়োজন করা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করছি প্রতিটি জেলা উপজেলায় একটি করে নৌকা বাইচ আয়োজনের।
সাধারণত বর্ষা মৌসুম অনেক পানি থাকে কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নদীতে পর্যাপ্ত পানি নেই। নানা কারণে বিলুপ্তির পথে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। আবহমান গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তবে গ্রামবাসীর উদ্যোগে এখনো হচ্ছে সুস্থ বিনোদনের এই উৎসব। এক সময় বর্ষায় নৌকা বাইচ ছিল দেশের প্রধান উৎসব। প্রতি বছর বর্ষাকালে ভরা ভাদ্রে এ উৎসব পালিত হয়।
থৈ থৈ পানি, মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দ আর লাখো দর্শনার্থীর হৈ হৈ রব, কাঁশি-বাঁশি আর ঝাঁজরের সুর, ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ আর দর্শনার্থীর করতালিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে চান্দহর ধলেশ্বরী নদীর দুই তীর। পানি ছিটিয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে নৌকার দলনেতা সতীর্থদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও উৎসাহ জোগান।
বাংলা ও বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির প্রাচীনতম এ উৎসব উপভোগ করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলেই মেতে ওঠে আনন্দে-উল্লাসে। নদীর পাড়ে বসে গ্রাম্যমেলা।
আল্লায় বলিয়া নাও খোলরে ভাই সক্কলি। আল্লাহ বলিয়া খোলো। ওরে আল্লা বল নাও খোল শয়তান যাবে দূরে। ওরে যে কলমা পইড়া দেছে মোহাম্মদ রাসূলরে ভাই সক্কল’ এই সারি গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানের মধ্যদিয়ে সোমবার মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর চান্দহর পয়েন্টে গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যের নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
নৌকার দলনেতা ঝাঁজ ও কাঁশি বাজিয়ে সতীর্থদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও উৎসাহ জোগান। বাংলা ও বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির প্রাচীনতম এ উৎসব উপভোগ করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধসহ নির্বিশেষে সকলেই মেতে ওঠে আনন্দে-উল্লাসে। নৌকা বাইচে ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০টি ঘাসী নৌকা অংশগ্রহণ করে।
ধামরাই থেকে আসা ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ বলেন, অনেক বছর পর এই নৌকা বাইচ দেখতে আসলাম। ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ দেখে অনেক ভালো লাগলো। তবে প্রতি বছরই যদি এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো তাহলে অনেক ভালো হতো। কারণ বর্তমান সময়ে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে। তার মতো আরও অনেকে দর্শনার্থী নদীর দুই কূলজুড়ে নৌকা বাইচ দেখতে লাখো দর্শনার্থী উপস্থিত হয়। ঢাকাসহ আশপাশের মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা তাদের পরিবার নিয়ে এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে উপস্থিত হন। এ সময় নদী পাড়ে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
সরেজমিন নৌকা বাইচ উপলক্ষে নদীর দুই তীরে হাজারো দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা। স্থানীয়রা বলছেন, নৌকা বাইচ উপলক্ষে তাদের বাড়িতে এসেছে নতুন অতিথি। বাড়িতে বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে নানা মুখরোচক খাবারের। এমন আয়োজনে খুশি তারা।