বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি দুর্নীতির মামলায় আজ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকারীরা। গ্রামীণ টেলিকমের ‘অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের’ অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের লভ্যাংশ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকারখানা পরিদপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে দুদক মামলা দায়ের করেছিল।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আইনজীবীসহ দুদক কার্যালয়ে হাজির হন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ড. ইউনূস তার স্বভাবসুলভ হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দুদক কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।
দুদক কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসার সময় অধ্যাপক ইউনূস এবং তার আইনজীবীকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। প্রথমে অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী মামলার বিষয়বস্তু এবং দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য তুলে ধরেন।
আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই অধ্যাপক ইউনূস দুদকে হাজির হয়েছেন।
এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা আইনজীবীকে এড়িয়ে অধ্যাপক ইউনূসের কাছ থেকে বক্তব্য জানতে চান। এনিয়ে অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের মধ্যে কিছুটা বিতণ্ডা হয়। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস তার আইনজীবীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
অধ্যাপক ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয় – তিনি দুদকের ভয়ে শঙ্কিত কী না? জবাবে তিনি বলেন, “ আমি তো অপরাধ করি নাই, শঙ্কিত কেন হবো? শঙ্কিত হবার কোন কারণ নাই।”
সাংবাদিকদের ক্রমাগত প্রশ্নে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাকে ডেকেছে, সেজন্য আমি এসেছি। আমার আর কিছু বলার নাই।” বিষয়টিকে তিনি ‘লিগ্যাল মেটার’ বা আইনগত বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন আইনগত বিষয়টি তার আইনজীবী ‘শান্তভাবে বুঝিয়ে’ দেবেন। সাংবাদিকরা অধ্যাপক ইউনূসকে একের পর এক প্রশ্ন অব্যাহত রাখলে তিনি বলেন, “আমাকে দিয়ে আর কিছু বলাইয়েন না।”
আইনজীবী যা বললেন:
গত ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকম থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ এনে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।
এর আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ২০২২ সালের ২৮শে জুলাই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক।
অভিযোগগুলো ছিল অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ছয় শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ। এছাড়া কোম্পানি থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ।
ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন দুদক কার্যালয়ের বাইরে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “গ্রামীণ টেলিকম একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার লক্ষ্য শিল্প কারখানা গড়ে তুলে বেকারত্ব দূর করা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। তাতে বলা আছে কেউ কোন মুনাফা নেবে না। এই মুনাফা উন্নয়নের জন্য একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হবে।”
কোম্পানি আইনের ২৮ ধারার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আইন অনুযায়ী যারা সমাজের কল্যাণের জন্য কাজ করবে তাদের কোন মুনাফা দেয় নিষিদ্ধ। তাই এই গ্রামীণ টেলিকম, কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি সিদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এটা লেবার আইনে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি নয়, কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোম্পানি আইনে।”