ভারী বর্ষণে ডুবেছে ধান-পুকুরের মাছ, কপালে ভাঁজ খামারিদের
আলফাজ সরকার, শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধি
টানা ভারী বর্ষণে কারনে গাজীপুরের শ্রীপুরে ডুবছে কৃষকদের রক্তঘামের ফসল রোপা আমন ধান ও মাছের খামার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষন হয়েছে। যার কারনে ঘরবন্দী হয়ে পড়ে জনসাধারণ। টানা বৃষ্টির পানির ঢলে গ্রামীন রাস্তা ঘাট,পুকুর ও জমিতে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে উপজেলার কাওরাইদ ও বরমী ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর পৌরসভায় মাছের খামার ডুবেছে। এমতাবস্থায় হতাশায় কপালে ভাঁজ পড়েছে খামারি ও কৃষকদের।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, রোপা আমন রোপনের সময় বৃষ্টির পানির দেখা ছিল না। আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র মাসেও এত পরিমান বৃষ্টি হয়নি। এমাসে আকস্মিক ভারী বর্ষণে বাইদ ও নিচু জমির যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই থইথই করছে পানি। প্রতিটি ব্রীজের মুখ দিয়ে নামতেই আছে স্রোত।
কৃষকরা বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শুরু হওয়া বৃষ্টিতে যে পরিমান পানি হয়েছে বছরের মধ্যে এত পরিমান বৃষ্টি হয়নি। এমন পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি রোপা আমান ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও টানা বৃষ্টির কারনে সবজি খেতও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কাওরাইদ গ্রামের কৃষক জমিরউদ্দী বলেন, বৃষ্টিতে ধানের ছড়া নিয়ে গাছ মাটিতে ঢলে পড়েছে। এতে রোপা আমনের ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। লোহাগাছ গ্রামের কৃষক আরফান আলী বলেন, আমার ২ বিঘা জমির ধান থোর অবস্থায় খেতে লুটিয়ে পড়েছে। খেতে পানি ভরে গেছে। বেশিদিন থাকলে হয়তো ধান পঁচে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলায় এ বছর ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ২৫ মেট্রিটন। অতি বৃষ্টিতে ধান থোর অবস্থায় খেতে পড়েছে যা পঁচে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। তবে, ৪৫% জমিতে বৃষ্টির পানি জমেছে। বৃষ্টি একেবারে থেমে গেলে এর সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে। যে সব জমি ডুবেছে এবং পানি ঢুকেছে সে সব জমি থেকে তিন চার দিনের মধ্যে পানি বের হলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় পার হলে ধান হবে না।
অন্যদিকে উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৫১৫টি পুকুর ও খামার রয়েছে। যার মালিক আছে ১ হাজার ২০০ জন। এমন ভারী বর্ষণে ২ শতাধিক পুকুরের মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে কোনোটার মাছ ভেসে গেছে আর কোনোটার মাছ অর্ধেক ভেসে গেছে। তবে, বেসরকারী হিসেবে উপজেলায় সরকারি খাসপুকুরের সংখ্যাই এক হাজারের মতো। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত উপজেলার ৫০ টি খামার ও আড়াই হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের সংখ্যা আরও বাড়বে। এসব পুকুরে বিভিন্ন জাতের বড় মাছ ও পোনা ছিল। এতে টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা বলে নির্ভরযোগ্য মৎস্যচাষী ও ব্যবসায়ী সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শ্রীপুর পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান, রুহুল আমিন, জুয়েল প্রধান জানান, এ এলাকায় অর্ধশতাধিক পুকুর এ ভারী বর্ষণে পুকুর ভরে প্রায় কয়েক লাখ টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। অনেকের বড় মাছগুলোর ওজন ছিল দুই থেকে আড়াই কেজি।
বরমীর বালিয়াপাড়া গ্রামের শাহীন আলম বলেন, “ভারী বর্ষণে এ এলাকার ৩০টি খামারের সব মাছ ভেসে গেছে। এখন অনেক চাষীর পথে বসার অবস্থা। আমার ১২৫ বিঘার ৩ টি খামার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ মাসেই সব মাছ বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সর্বনাশ হয়ে গেছে”। একই এলাকার কফিল উদ্দিনের ২৫ বিঘার খামারের সব মাছ নদীতে ভেসে গেছে।
মৎস্যচাষী ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মৎস্য খামারী আশিক বিন ইদ্রিস জানান, তিনি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লোন নিয়ে ৭৫ বিঘার খামারে মাছচাষ ব্যবসা করে আসছেন। ভারী বর্ষণ ও ব্যাপক বৃষ্টিপাতে তার খামারে প্লাবিত হয়ে মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। কোন মতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। চাষকৃত এসব মাছ বিক্রি করে কিস্তি চালান তিনি। এখন কি করব বলে চিন্তিত হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন ইদ্রিস।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহিদুল আবরার মোহনা টেলিভিশনকে বলেন, “ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু মুষুলধারে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের জন্য বের হওয়া সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের সংখ্যা নোট করে তালিকা করে পরে বলতে হবে”। এখনও যাদের পুকুর পুরোনো ডুবেনি তারা চারদিকে জাল প্রক্রিয়ায় রক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া আক্তার বন্যা মোহনা টেলিভিশনকে বলেন, “আমাদের অফিসের লোকজন নিয়মিতই কৃষকদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে,শ্রীপুরের জমিতে এসব পানি দীর্ঘস্থায়ী হয়না বিধায় কৃষকদের উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বেনা বলে আশা করছি”।
,