রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় উদ্বোধন শেষে নান্দনিক ফুটওভার ব্রিজ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা জাতীয় সংসদ ভবনের ডিজাইনের সাথে মিল রেখে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজটির শৈল্পিক নকশার কারণে এখন থেকে সাধারণ পথচারী এটি ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যে রাস্তা পারাপার করত পারবেন। এছাড়াও ব্রিজটি থেকে সরাসরি নিকটস্ত বিপণি-বিতানে প্রবেশের জন্য রয়েছে কয়েকটি প্রবেশ মুখ।
এ সময় ফুটওভার ব্রিজের অদূরে নির্মিত একটি পুলিশবক্সেরও উদ্বোধন করা হয়। রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ফার্মগেটে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ওভার ব্রিজেই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। তার যদি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সহজে যেতে পারেন না। অনেক নারী পুলিশ বা সার্জন দায়িত্ব পালন করেন, তারা অনেক সময় অসুবিধার মধ্যে পড়েন।’
ফুটপাত বন্ধ না করে, জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক রেখে আধুনিক সুবিধা সম্মলিত একটি পুলিশবক্স নির্মাণের জন্য তিনি ডিএনসিসি মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি অন্যান্য স্থানেও এরূপ নান্দনিক পুলিশবক্স ও গণশৌচাগার নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম আগত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ঢাকায় প্রথম দিকে যে ফুট ওভারব্রিজগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল ফার্মগেটের ফুট ওভারব্রিজ ছিল তার একটি। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানের সময় এটি ভেঙ্গে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। শুধু সরিয়ে নিলে তো হবে না। মানুষকে তো আরেকটি বিকল্প পথ করে দিতে হবে। তারই বিকল্প হিসেবে এই আধুনিক ও বহুমুখী ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মাথায় ছিল যেহেতু আশেপাশে একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে তার আদলেই করতে হবে। তাই জাতীয় সংসদ ভবনের সাথে মিল রেখে এটি করা হয়েছে।’
এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ফুট ওভারব্রিজ হল কিন্তু এখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এটাতে যেন কেউ দোকান না বসায়, হকার না বসে। কেউ যাতে নোংরা না করে। এটা সাধারণ পথচারীদের চলাচলের রাস্তা, কেউ যাতে কোনো ভাবে বিঘœ না ঘটাতে পারে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর জন্য রাস্তায় পুলিশবক্সের প্রয়োজন আছে। ডিএমপির মাধ্যমে আবেদন করলে আমরা আলোচনা সাপেক্ষে করে দেব। এমনভাবে করবো যাতে পথচারীরও অসুবিধা না হয় আবার পুলিশ সদস্যদেরও কোনো অসুবিধা না হয়।’
তিনি কোনো কোম্পানীর বিজ্ঞাপন প্রচারের অংশ হিসেবে তাদের কাছ থেকে অপরিকল্পিতভাবে পুলিশবক্স না করানোর জন্য অনুরোধ করেন। এতে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং দৃশ্য দূষণ হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা। এছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ সময় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান ও সংরক্ষিত আসন ১০ এর নারী কাউন্সিলর হামিদা আক্তার মিতু বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের শেরেবাংলা নগর এর মাস্টারপ্ল্যান এর শুরু এই ফার্মগেট মোড় থেকে। তার স্থাপত্য চর্চা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নকশা করা হয়েছে। এটি নির্মাণে অর্থ প্রদান করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। চলন্ত সিঁড়ির সুবিধাসহ ২০৬ ফুট লম্বা ও ২১ ফুট প্রস্তের এই ফুট ওভারব্রিজটি সার্বক্ষণিক সিটি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ফুটওভার ব্রিজ উদ্বোধন শেষে অদূরেই নির্মিত আধুনিক পুলিশবক্সটি উদ্বোধন করা হয়।