কৃষি খাত বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধান করা ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালেরও জোগান দেয়। দেশের জাতীয় আয়ের শতকরা ১৩ ভাগ আসে কৃষি থেকে। আর শতকরা ৪০ দশমিক ৬ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হয় এ খাতে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ণে জোর দিতে হবে। এ উপলব্ধি থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিনীতিকে সাজিয়ে ছিলেন কৃষকবান্ধব করে।
১৯৭১ সালে, যুদ্ধের কারণে বীজ বপন তো দূরের কথা, গ্রামচ্যুত কিংবা দেশান্তরী হওয়ার কারণে ফসলই ফলাতে পারেনি বহু কৃষক। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে অক্সফাম, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশঙ্কা ছিলো, অন্তত ৫০ লাখ মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাবে,দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। নানারকম প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র জাতির পিতার দূরদর্শিতা ও সময়োচিত কৃষি উন্নয়নের পদক্ষেপের কারণে,১৯৭২ সালে দুর্ভিক্ষ হয়নি। বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে বঙ্গবন্ধু ৫০১ কোটি টাকার মধ্যে ১০৩ কোটি টাকা কৃষি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেন,সরকার গঠনের পরপরই কৃষিকে অগ্রাধিকারভুক্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দেয়াসহ স্বল্প মেয়াদে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করেন। পাশাপাশি কৃষিঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার ও খাসজমি বিতরণ করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের চেষ্টা করে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন সমৃদ্ধ কৃষিই স্বনির্ভর অর্থনীতির পূর্বশর্ত। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সপরিবারে প্রাণ দিতে হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে আজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৪০ লাখ টন,তাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ মজুদকরণ করা ফলে,পরবর্তী পাঁচ বছরে উন্নয়ন-অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে অর্জিত হয় চমকপ্রদ সাফল্য।
প্রথমবারের মতো দেশ খাদ্যে নির্ভরশীলতা অর্জন করে, কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এফএও সেরেস পদকে ভূষিত হন,২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ২৬ লাখ টন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদ’ অনুযায়ী ‘রূপকল্প ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়। পাশাপাশি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে,প্রথম ক্যাবিনেট সভায় সারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি প্রদান,১০ টাকায় কৃষকের জন্য ব্যাংক হিসাব চালুকরণ, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, কৃষিতে প্রণোদনা প্রদান, সার বিতরণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, বর্তমান সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য হলো কৃষি গবেষণাকে অগ্রাধিকার প্রদান, ফলশ্রুতিতে ২০০৮-০৯ সালে মোট খাদ্যশস্যের (চাল, গম, ভুট্টা) উৎপাদন যেখানে ছিল ৩২৮.৯৫ লাখ টন, তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়ায় ৪৩২.১৫ লাখ টন।
রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নকালেই বাংলাদেশ দুটি স্মরণীয় সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। প্রথমত, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের শ্রেণীকরণে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মাথাপিছু আয়ে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে আমাদের মাথা পিছু আয় হতে হবে ৪ হাজার ১২৫ মার্কিন ডলার, যা এ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ বাস্তবায়ন কালেই অর্জিত হবে। দ্বিতীয় ঐতিহাসিক সাফল্য হচ্ছে, জাতিসংঘের শ্রেণীকরণে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই নির্দিষ্ট মান অর্জন করতে সফল হয়েছে। সম্প্রতি ২য় ধাপেও বাংলাদেশ আবার তিনটি সূচকেই গত ১০ বছরের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতির ধারায় আরও ভাল করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া অনুপ্রেরণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিসহ দেশের প্রতিটি খাতকে ঢেলে সাজিয়েছেন। উন্নয়নে সবদিক থেকে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।