ঢাকাসংবাদ সারাদেশ
সহকারী অধ্যাপক ও অফিস সহকারীর মধ্যে মারামারি! অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ
আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর)প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী আমিনুল হকের বিরুদ্ধে। তবে,অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে আকস্মিক ভাবে তাঁকে চড় মারার অভিযোগ এনেছেন অফিস সহকারী আমিনুল।
শুক্রবার ( ২৭ অক্টোবর) সকালের দিকে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগের কপি মারফত সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এরআগে, বুধবার দুপুরের দিকে মাদ্রাসা চলাকালে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর একজন সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম শ্রীপুর মডেল থানা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অন্যদিকে, অফিস সহকারী আমিনুল ইসলামও প্রশাসনে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান।
সহকারি অধ্যাপকের দেওয়া অভিযোগ সুত্রে জানা যায়,২০২২ সালের ৫ মার্চ থেকে ৩০ মে ২০২৩ পর্যন্ত বরামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন আবুল কালাম। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজানা বেগম দায়িত্ব গ্রহনের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর অফিস সহকারী আমিনুল মাদরাসার সরকারী বই ও কাগজ গোপনে বিক্রি করে দেন। মাদরাসার অধ্যক্ষের জন্য বরাদ্দকৃত সিম নিজে ব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করার কারণে সভাপতির নির্দেশক্রমে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু নোটিশের জবাব না দিয়ে সহকারী অধ্যাপকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় অফিস সহকারী আমিনুল হক। এরই রেশ ধরে ২৫ অক্টোবর দুপুরে পূর্বের ঘটনার জের ধরে মাদরাসায় শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে দুজনের মধ্যে তর্কবির্তক হয়। এসময় সহকারী অধ্যাপককে গালিগালাজ শুরু করে। প্রতিবাদ করলে আমিনুল সহকারী অধ্যাপক আবুল কালামকে মাথায় আঘাত করে। এতে আবুল কালাম আজাদ আহত হন। ওইদিনই তিনি শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক শরিফ রায়হান বলেন ” আমি মসজিদ থেকে এসে বাংলা প্রভাষক সোনিয়া কাঁদছে। কারন জিজ্ঞেস করলে অফিস সহকারী আমিনুল হক তাঁকে ধমক দিয়েছে বলে জানান। পরে আমি প্রতিবাদ করেছি। এ ঘটনার পর তর্কাতর্কি চলতে থাকাবস্থায় দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়”।
মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন অফিস সহকারী কম্পিউটারে বসে নতুন শিক্ষকদের এমপিও সিট তৈরি করতে ছিল। এসময় বাংলা প্রভাষক একটি কাজের জন্য আমিনুলকে বলে। আমিনুল ওই কাজের প্রিন্ট করার পর দেওয়ার সোনিয়া ম্যাডামের কাজ করবেন বলে জানান। এতে পরপর বলায় আমিনুল হক তাকে জানান। এসময় প্রভাষক সোনিয়া মানসিক ভাবে কষ্ট পেয়েছেন বলে কয়েকজন শিক্ষককে জানান। জোহরের নামাজ পড়ে এসে এ কথা শুনে ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক শরিফ রায়হান আমিনুল হককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে অফিস সহকারী আমিনুলকে চেয়ারে বসা অবস্থায় আকস্মিক ভাবে সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ থাপ্পর মারেন। এতে চেয়ার থেকে সিটকে পড়ে যান আমিনুল ইসলাম। পরে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসময় এলাকাবাসীর কাছে অবরুদ্ধ হয় সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। পরে কয়েকজনে সহায়তায় অধ্যাপক আবুল কালাম ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এদিকে, বৃদ্ধ অসহায় অফিস সহকারীর গায়ে হাত তোলার প্রতিবাদে মাদরাসার সামনে বিক্ষোভ প্রতিবাদ জানায় স্থানীয়রা। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। তবে, ওইদিন মাদ্রাসায় আসেনি আবুল কালাম আজাদ ও ইংরেজি প্রভাষক এসে হাজিরা খাতায় সহি করে তাৎক্ষনিক মাদ্রাসা ত্যাগ করেন।
তবে, আবুল কালামকে মারার বিষয় অস্বীকার করে অফিস সহকারী আমিনুল হক বলেন, “আমি টানা ২ ঘন্টা কাজ করতেছিলাম। কাজ শেষ না হতেই সোনিয়া ম্যাডাম আমাকে উনার কাজ আগে করতে বললে আমি বারবার উনাকে এ কাজ শেষ করে করবো বলেছিলাম। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ হয়ে আমাকে রাগ করে বললে আমিও রাগে উনার কাজ আগামীকাল করবো বলেছি। এতেই তিনি চলে গিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের জানান। পরে আমি জোহরের নামাজের পর চেয়ারে বসা মাত্রই আবুল কালাম আজাদ আমাকে থাপ্পড় মারে। আমি উনাকে কিছুই করিনি”।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে নবনিযুক্ত বাংলা প্রভাষক সেনিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজানা বেগম বলেন,” আমরা প্রথমে মিমাংসার চেষ্টা করেছি।পরে উভয়ের অভিযোগ সভাপতির কাছে জমা পড়েছে। উনাদের সিদ্ধান্তে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, “বিষয়টি মুঠোফোনে শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও মাদরাসার সভাপতি মোঃ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় পক্ষে বিপক্ষে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।