আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি শুক্রবার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, আমরা অশান্তি করতে চাই না। কারণ আমরা ক্ষমতায়। আমাদের দ্বারা অশান্তি হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অশান্তি তারা চায়, যারা পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। তাদের মতলব সম্পর্কে সতর্কতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “আমরা শান্তি সমাবেশ করছি, আগামীকালও শান্তি সমাবেশ করব। আমরা অশান্তি করতে চাই না, আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন অশান্তি করব? বিএনপি অশান্তি করতে চায়।”
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ২৮ অক্টোবর নিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো চাপে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে পুরনো দিনের কথা ভুলতে পারি না। ২০১৩, ১৪ সালের অগ্নিসংযোগের কথা ভুলতে পারি না। তারাতো আগুন ছাড়া কথা বলে না। শান্তি তারা আসলে মন থেকে চায় কিনা, এটা দেখতে হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে, কোনো সংশয়ের কারণ নেই। আপনারাতো বাইরের কেউ না দেশেরই মানুষ, আপনারা দেখবেন।’
২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে দেখিয়ে দেবো, আমরা শান্তির পক্ষে। সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। এদের দুরভিসন্ধি আছে, সাম্প্রদায়িক আরও দুএকটা শক্তি নিয়ে তারা অপকর্ম করতে চাইবে।’
তিনি বলেন, ফখরুলের সব খেলা ধরে ফেলেছি। কী করবে, টেমস নদীর পাড় থেকে ধমক খায়। মাঝে মধ্যে নার্ভাস দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের মঞ্চ করতে দেয়নি। মির্জা ফখরুল মিথ্যাচার করেছে, সরকার নাকি আমাদের অনুমতি দিয়েছে, মঞ্চ করছি। আমরা কিছুটা করেছিলাম, পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ যখন অনুমতি দেবে, আমরা তখনই মঞ্চ করবো।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির কর্মী হত্যা মামলায় খোকন গ্রেফতার। অথচ অভিযোগ করছে, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার। তাহলে কী আপনাদের কর্মী হত্যার বিচার হবে না? এ ক্ষেত্রে সরকারতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও ছাড় দেয়নি। আপনিতো টেনেটুনে ২২ জনের নাম বলেছেন। আর আপনারা আমাদের ২২ হাজার নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছেন, আমরা ভুলিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে দেবে না, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই। এ অপশক্তির বার বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া উচিত নয়। এ অপশক্তির চিরতরে অবসান ঘটাতে হবে। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকতে হবে।
লড়াই করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশ স্বাধীনতার আদর্শে চলবে, বাকি পাকিস্তানের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে চলবে, এটা আমাদের ঠিক করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭১, ৭৫ এর অপশক্তির সঙ্গে আপস করতে পারি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে আদালত। এ ব্যবস্থা নিয়ে আমরা ফাইট করেছিলাম। কিন্তু এ ব্যবস্থা বিতর্কিত করেছে তারা। বিচারপতি খায়রুল হক সংবিধানকে কচুকাটা করেননি, বরং সঠিক জায়গায় পুনঃস্থাপন করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন নেই, তিনি রায় দিয়েছেন, এটা কী অন্যায় করেছেন?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশের ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও পরিশীলিত। এটা আমরা বিদেশী কূটনীতিকদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। যার কারণে নিজেদের ক্ষুধার আগুন নেভাতে মরণ কামড় দেবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ইতিহাস হলো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ও স্বৈরশাসনের ইতিহাস। ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও হত্যা ধর্ষণের এবং দুর্নীতির ইতিহাস। বার বার বিশ্বে বাংলাদেশকে কালেমা লেপন করেছে। তারা দুর্নীতি করে নিজের আখের গোছায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তি উন্নয়ন অগ্রগতির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে একটি চিহ্নিত মহল সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টা করছে। বিএনপি জামায়তের নেতৃত্বে দেশি বিদেশি মহল আবারও দেশে নৈরাজ্য করতে চায়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চায়। তাদের রাজনীতি হলো যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করা। বর্তমানে তারা সেটারই প্র্যাকটিস করছে। তারা জনগণের ওপর দুঃশাসন চাপিয়ে দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছাতে চায়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মো. ফারুক খান, শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন।