জাতীয়

সংকট কাটানোর জন্য দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে

মোহনা অনলাইন

বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধীদের বিরোধিতার মুখেই জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কমিশন। ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনাও শুরু হয়ে গেছে। এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভোটের তপশিল ঘোষণা করা হবে। তার আগে ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তপশিলের কথা তুলে ধরবে কমিশন।

এমন প্রেক্ষাপটে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের সঙ্গে শনিবার আবারও শেষবারের মতো সংলাপের আয়োজন করে ইসি। সেখানে দুই ধাপের সংলাপে ২৬টি দল অংশ নিলেও বাকি ১৮টি দল সেই সংলাপ বর্জন করে। আবার সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ১১টি দল সরাসরি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোটের তপশিল ঘোষণার কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবি করেছে দুটি দল। ফলে সংলাপ কেন্দ্র করে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে ইসির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার ইস্যুটি আবারও স্পষ্ট হয়েছে।

সংকটময় এ পরিস্থিতিতে গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশন গঠন ও শপথের পর থেকেই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়ে। নতুন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছেন, আস্থা অর্জনই এ কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে আয়োজিত ইসির সেই সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৯টি দল। ওই সংলাপে ১৮টি দল নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়। গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপেও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন।

এর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট করতে নিবন্ধিত দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। ইভিএম নিয়ে ইসির ওই মতবিনিময়ে ২৮টি দল অংশ নিলেও বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। ইসি সূত্র জানায়, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানাভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে। সর্বশেষ ইসির পর্যবেক্ষক তালিকা থেকে পুরোনো তালিকায় থাকা অধ্যাপক আবেদ আলীর বিতর্কিত পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’ ও ‘সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন’কে বাদ দিয়ে তালিকা প্রকাশ করে ইসি। এ দুটি সংগঠনকে অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের আস্থাভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে। ফলে নানা চেষ্টা-তদবিরের পরও কমিশন তাদের পর্যবেক্ষক তালিকায় রাখেনি। কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে ইসির ইমেজ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল।

গত বছর ১২ অক্টোবর নানা অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের ভোট বন্ধ করে দিয়ে রেকর্ড তৈরি করে বর্তমান কমিশন। শুধু ভোট বাতিলই নয়; সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভোট অনিয়মে জড়িত পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করা হয়। কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায় দলমত নির্বিশেষে সবাই। সিসি ক্যামেরায় বিভিন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্তও ছিল প্রশংসার।

বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতার মুখে এবং দেশের অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে ব্যয়বহুল ইভিএম প্রকল্প থেকে সরে এসে অতীতের ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় নির্বাচন ব্যালটেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান কমিশন। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘ট্রায়াল’ হিসেবে নেওয়া পাঁচ সিটিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে সম্প্রতি অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বর্তমান কমিশন।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নানা চেষ্টা আর উদ্যোগের পরও জাতীয় নির্বাচনের ঠিক দ্বারপ্রান্তে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের ইস্যুটি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে কমিশনের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোই সেই সুযোগ রাখেনি। সেজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা ও নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছেন।

বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে হরতাল, অবরোধসহ নানা কর্মসূচিতে রাজপথে রয়েছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। চলমান এ সংকটে কমিশনের সংলাপ কোনো কাজে দেয়নি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, চলমান সংকট সমাধান ও ইসির প্রতি আস্থা বাড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে। এতে সংলাপ ও সমঝোতার বিকল্প নেই।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button