জাতীয়

অবরোধের দ্বিতীয় দিন ১২ যানবাহনে আগুন

মোহনা অনলাইন

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীতে তিনটি, চট্টগ্রামে তিনটি, গাজীপুরে দুটি, নোয়াখালীতে একটি, বগুড়ায় একটি, ফেনীতে একটি ও নারায়ণগঞ্জে একটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়।

রোববার (৫ নভেম্বর) গভীর রাত থেকে সোমবার (৬ নভেম্বর) রাত ১০টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

রাজধানী ঢাকায় অবরোধের সমর্থনে ৩টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সবশেষ সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে খিলক্ষেত এলাকায় আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের পাশে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগার তথ্য পাই। আমাদের দুটি ইউনিট কাজ করে আগুন নিভিয়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

এর আগে দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার হল মার্কেটের সামনে বিকল্প অটো পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাসটিতে কিছু যাত্রী ছিলেন, তারা সবাই নিরাপদে নেমে আসতে পেরেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি জানান, কয়েকজন যুবক বাসের ভেতরে ঢুকে আগুন দেয়। তারাই আবার আগুন-আগুন করতে করতে নেমে যায়। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নেমে পড়েন যাত্রীরাও। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসটির আগুন নেভায়। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, সোমবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের একটি দোতলা বিআরটিসি বাসে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে দ্রুত আগুন নেভান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাসুক মিয়া বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর এলাকা থেকে পল্লবী যাওয়ার পথে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে বাসটির দ্বিতীয় তলার দুটি আসন পুড়ে যায়। তবে কেউ হতাহত হননি।

চট্টগ্রাম : অবরোধের সমর্থনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় একটি যাত্রীবাহী বাস এবং নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আগুন দেওয়া হয়। সোমবার ভোরের দিকে এ দুটি ঘটনা ঘটে। তবে এ দুই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমহনী বাজারের ট্র্যাফিক বক্স এলাকায় মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তারা এসে বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরের শিববাড়ি-শিমুলতলী সড়কের বটতলা এলাকায় সড়কের পাশে পার্কিং করা গাজীপুর পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর ভোর ৪টার দিকে কেপি পরিবহনের আরও একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

নোয়াখালী : রোববার রাতে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা ডাকবাংলোর সামনে পেট্রোল ঢেলে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৬টি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকজন যুবক থেমে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বালু ও পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পিকআপ ভ্যানের সামনের অংশ পুড়ে গেছে। গাড়ির পাশে পেট্রোলের একটি খালি বোতল পাওয়া যায়।

চাটখিল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।

বগুড়া : বগুড়ার শাজাহানপুরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বেতগাড়ীতে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি পানিবাহী লরিতে আগুন দেওয়া হয়। সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

লরির চালক হাফিজুর রহমান বলেন, সড়কে পানি দিয়ে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এই সময় ১০ থেকে ১২ জন যুবক হেঁটে এসে গাড়ি লক্ষ্য করে কিছু একটা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়।

ফেনী : সোমবার দুপুরে ফেনীতে মাছবোঝাই একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আগুন দেওয়া হয়।  এছাড়া একটি মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। জেলা শহরের রামপুর সওদাগর বাড়ি সড়ক ও তাকিয়া রোডে এসব ঘটনা ঘটে।

এদিকে, দুপুরের দিকে শহরের তাকিয়া রোডে ৬-৭টি মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে ভাঙচুর চালিয়ে পালিয়ে যায় কিছু যুবক।

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে একটি কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।

সোমবার (৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে ওই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। সেদিন দুপুরের দিকে বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী লোকজনের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করার পর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয় এবং বেশকিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়।

সমাবেশ বানচালের প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি হরতাল পালন করে। হরতালের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা ৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামায়াত। ওই কয়েকদিনে মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেনসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতার অভিযান এখনো অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। সবশেষ গ্রেফতার করা হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে। এছাড়া গত কয়েকদিনে সাবেক জাতীয় ফুটবলার আমিনুল হকসহ বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার আবারও অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও এর শরিকরা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button