বিনোদন

ডিপফেকে সবচেয়ে বেশি শিকার তারকারা

মোহনা অনলাইন

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে সহজ একই সঙ্গে এর অপব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে বিপথগামী। প্রযুক্তির অসৎ ব্যবহারে অনেকের সম্ভাবনাময়ী জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, এমন উদাহরণ কম নেই। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বে নব-আবিষ্কৃত ভিডিও এডিটিং প্রযুক্তি ‘ডিপফেক’ মুহূর্তেই যে কারো সম্ভাবনাময় জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে। অস্বীকার করার উপায় নেই, ডিপফেক একটি বড় আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে। অত্যাধুনিক এ ভিডিও এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোনো ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে (হতে পারে ব্যক্তির ঐ ছবি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে) মুহূর্তেই তৈরি করে ফেলা হচ্ছে পর্নোগ্রাফি—কী সাংঘাতিক বিষয়!।

বর্তমানে অনেক বেশি ডিপফেক ছবি ও ভিডিও তৈরি হচ্ছে। এসব ছবি ও ভিডিওর বেশির ভাগই তৈরি হয় সেলিব্রেটিদের নিয়ে। এক গবেষণায় দেখা দেছে, ডিপফেক কনটেন্টের ৯৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফির ৯৯ শতাংশে নারীকেন্দ্রিক বিষয়বস্তু রয়েছে।
ইউনাইটেড স্টেটভিত্তিক হোম সিকিউরিটি হিরোস-এর ২০২৩ স্টেট অব ডিপফেকস রিপোর্ট অনুসারে, জনসাধারণের ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে যারা বিনোদন শিল্পে আছে; তাদের দৃশ্যমানতা এবং ক্যারিয়ারের জন্য উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এইচটির শেয়ার করা এক রিপোর্টে দেখা যায়, ডিপফেক ভিডিওগুলোর ৯৪ শতাংশই বিনোদন অঙ্গনের মানুষ। যেমন: গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ইনফ্লুয়েন্সার, মডেল, ক্রীড়াবিদসহ অনেকে।
কেন ডিপফেক বাড়ছে?
সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছর অনলাইনে পাওয়া ডিপফেক ভিডিওর সংখ্যা ৫৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা, ডিপফেক ভিডিও তৈরি করতে আগের চেয়ে অনেক কম সময় লাগে। ৬০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তৈরি করতে ২৫ মিনিটেরও কম সময় লাগে। শুধু একটি পরিষ্কার মুখের ছবি ব্যবহার করেই এটি করা যায় এবং এর কোনো খরচ নেই।

সমীক্ষা অনুযায়ী, জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্কের (GAN) ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া ডিপফেক তৈরির মাধ্যমগুলো এখন অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে গেছে। এতে সহজেই ডিপফেক তৈরি করা হচ্ছে।
প্রতি তিনজনের একজন ডিপফেক টুল ব্যবহারকারীকে এআই-চালিত ম্যানিপুলেশন কৌশল ব্যবহার করে প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট তৈরি করতে দেয়। যদিও এই প্ল্যাটফর্মগুলোর ৯২.৩ শতাংশ নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার সঙ্গে বিনা মূল্যে অ্যাক্সেস করার জন্য অফার করে।
‘ডিপফেক অ্যান্ড ইনফোক্যালিপ্স’ নামের বইয়ের রচয়িতা নিনা শিক বলছেন, ডিপফেক কনটেন্টের নির্মাতারা ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। এ কারণে কোনো ধরনের আইনগত সুরক্ষা তাদের ধরতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্যই ডিপফেক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি পর্নোগ্রাফিক ভিডিওর সংখ্যা প্রতি ছয় মাস পরপর দ্বিগুণ হচ্ছে।’
সংবেদনশীলতার হারের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার নাম সবার উপরে। এ তালিকায় অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে: আমেরিকা (২০ শতাংশ), জাপান (১০ শতাংশ), ইংল্যান্ড (৬ শতাংশ) ও ভারত (২ শতাংশ)। চীন, তাইওয়ান ও ইজরাইলের মতো দেশগুলো ৩ থেকে ১ শতাংশের সীমার মধ্যে পড়ে, যেখানে বাকি বিশ্ব একত্রে ডিপফেক কনটেন্টের জন্য ৪ শতাংশ টার্গেট হয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশমিকার চেহারার অদলবদল করে একটি ডিপফেক ভিডিও তৈরি করা হয়। যদিও পরে জানা গেছে সেই ভিডিওটি আসলে কার। অন্যদিকে মঙ্গলবার বলিউডের আরেক অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের একটি ডিপফেক ছবি ভাইরাল হয়েছে। আসন্ন সিনেমা ‘টাইগার-৩’-এর ট্রেলারের একটি দৃশ্যে গোসলের পোশাকে দেখা গিয়েছিল ক্যাটরিনাকে। সেই দৃশ্যে শরীরে তোয়ালে জড়িয়ে অন্য একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে লড়াই করতে দেখা যায় অভিনেত্রীকে। সেই দৃশ্যেই ক্যাটরিনাকে আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button