তৃতীয় দফায় বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় ও শেষ দিনে সকাল থেকেই রাজধানীতে যান চলাচল স্বাভাবিক। কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় রাজধানীতে ৪টি বাসে আগুন দেয়া হলেও তার কোনও প্রভাব পড়েনি আজ সড়কে।
অবশ্য রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর ও সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অধিকাংশ বাস কোম্পানির কাউন্টারই বন্ধ দেখা গেছে। বরাবরের মতো আতঙ্কের মধ্যেই পরিবহন মালিকরা বাস চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, গতকাল (বুধবার) সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। এদিন রাজাধানীর কমলাপুর থেকেও সবকটি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। এছাড়া শিডিউল অনুযায়ী পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন যথাসময়ে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছেছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, ধানমন্ডি, ফার্মগেট এবং বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব নেই। সকালের দিকে যানবাহন সবসময় কিছুটা কম থাকে, সে হিসেবে এখনও কম আছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল বাড়তে থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যেমনটা গতকাল সারাদিন ঢাকার রাস্তায় দেখা গেছে। কোথাও কোথাও হালকা যানজটও দেখা গেছে।
এদিকে, সকালে গণপরিবহন চলার পাশাপাশি বিভিন্ন অফিসের পরিবহন রাস্তায় দেখা গেছে। কর্মীদের অফিসে নিতে সরকারের বিভিন্ন দফতর/সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস/মাইক্রোবাসও রাস্তায় চলছে। এছাড়া গণপরিবহন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় গন্তব্যে যেতে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না যাত্রীদের।
যদিও পরিবহনের মালিক, কর্মী এবং যাত্রী সবার মধ্যেই আতঙ্ক আছে। কিন্তু অবরোধের প্রথম দিকে ভয়-আতঙ্ক নিয়ে বসে থাকলেও জীবিকার তাগিদে এখন সবাই বের হয়েছেন। আবিদ হাসান নামে এক চাকরিজীবী বলেন, এ অবরোধে বাস চলাচল প্রায় স্বাভাবিক। শুরুর দিকে গণপরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। তখন ভোগান্তি হয়েছে। তবে বাসে হুটহাট করে আগুন লাগিয়ে দেয়ায় একটা আতঙ্ক তো রয়েছেই।
তবে অবরোধের কারণে ঢাকায় যানজট কমেছে। এতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যেতে পেরে খুশি বাবুল শেখ। সাভার থেকে ফার্মগেটে সপ্তাহে তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে আসেন তিনি। সকালেও এসেছেন। তিনি জানান, ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে তিনি চলে এসেছেন। মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস না থাকায় গাবতলীতে জ্যাম পড়ে না। আবার ঢাকায় যানজট কম থাকায় খুব দ্রুতই গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে।
এছাড়া অবরোধের শুরু থেকেই যেকোন নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা প্রতিটি মোড়ে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি টহল টিমের মাধ্যমে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদি কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে চেক করা হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত অবরোধের সমর্থনে কোন ধরনের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
এদিকে, অবরোধের কারণে দূরপাল্লার গাড়ি চালাতে না পারায় পরিবহন শ্রমিকদের আয়-রোজগারে টান পড়েছে। স্টাফদের দৈনিক খরচ দিতে পারছে না মালিকরা। বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বগতিতে সবাই বিপদে পড়েছে। যদিও অবরোধের মধ্যেও সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মালবাহী পিকআপ, ট্রাকও চলাচল করেছে নির্বিঘ্নে। কিন্তু পুলিশ দূরপাল্লার বাসগুলোকে প্রটোকল দেয়ার ঘোষণা দিলেও মালিকরা ভয়ে রাস্তায় বাস নামাচ্ছেন না।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপির তৃতীয় দফায় দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি চলছে। বুধবার সকাল ৬টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত।