যুদ্ধ চলতে থাকলে আরও ৫ লাখের বেশী ফিলিস্তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে: জাতিসংঘ
মোহনা অনলাইন
গাজায় যুদ্ধ দ্বিতীয় মাসে গড়ালে ফিলিস্তিনে দারিদ্র্যের হার ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আরো ৫ লাখের বেশী লোক দারিদ্রও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে। জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে এ কথা জানিয়েছে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৮.৪ শতাংশ কমে যাবে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং পশ্চিম এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইএসসিডব্লিউএ) প্রাথমিক অনুমিত হিসাব অনুসারে এই ক্ষতির পরিমাণ ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার।
দুটি সংস্থা ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধের আর্থ-সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, গাজা যুদ্ধের একমাসে দারিদ্র্য ২০ শতাংশ বেড়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
মূল্যায়নে আরও জোর দেয়া হয় যে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অনুমান করে যে যুদ্ধের প্রথম মাসে ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৯০ হাজার লোক চাকরি হারিয়েছে।
অনুমান অনুসারে, যুদ্ধের তৃতীয় মাসে দারিদ্র্য প্রায় ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যাতে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া অতিরিক্ত লোকের সংখ্যা ৬ লাখ ৬০ হাজারের বেশি বৃদ্ধি পাবে। এতে মোট ২৫০ কোটি ডলারের ক্ষতির সাথে জিডিপি হ্রাস পাবে ১২.২ শতাংশ।
ইএসসিডব্লিউএ এর নির্বাহী সচিব রোলা দাশতি বলেছেন, বর্তমানে ১৮ লাখ ফিলিস্তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং আরব দেশগুলোর জন্য ইউএনডিপির আঞ্চলিক ব্যুরো পরিচালক আবদুল্লাহ আল দারদারি বলেছেন, ৭ অক্টোবরের আগে গাজায় দারিদ্র্যের হার ছিল ৬১ শতাংশ। পশ্চিম তীরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩০ শতাংশ।
ইউএনডিপি প্রশাসক আচিম স্টেইনার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকায় অভূতপূর্ব জীবনহানি, মানুষের দুর্ভোগ এবং ধ্বংসলীলা অগ্রহণযোগ্য।’ এই মূল্যায়ন আমাদের সতর্ক করে যে, এই যুদ্ধের প্রভাবগুলোও দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এটি গাজার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। মানবিক বিপর্যয়ের উপরে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি উন্নয়ন সংকটও রয়েছে। যুদ্ধ দ্রুত দারিদ্র্যকে ত্বরান্বিত করছে।’
ইএসসিডব্লিউএ এর নির্বাহী সচিব রোলা দাশতি এবং ইউএনডিপির আঞ্চলিক ব্যুরো পরিচালক আবদুল্লাহ আল দারদারি একসাথে প্রতিবেদনটি প্রকাশকালে জনসংখ্যার বৃহৎ আকারের বাস্তুচ্যুতি, ব্যাপক ধ্বংস এবং গাজা অবরোধের কারণে উপকরণসহ সম্পদের অনিশ্চিত সরবরাহ বিবেচনা করে রোলা দাশতি সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পরে গাজায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার খুব শিগগির হবে না।
তিনি আরও সতর্ক করেন যে, যুদ্ধের পরিণতি আরও গুরুতর হবে কারণ এই দারিদ্র্য বৃদ্ধি শুধুমাত্র উপার্জনের অভাবের জন্য হয়নি।
তিনি বলেন,‘এটি শুধুমাত্র অর্থ-সরবরাহ কেন্দ্রিক দারিদ্র্য নয়। এটি বহুমাত্রিক দারিদ্র্য যা আরও গুরুত্বপূর্ণ।’
রোলা দাশতি বলেন, প্রায় সমস্ত গাজাবাসী (৯৬ শতাংশ) বর্তমানে বহুমাত্রিক দরিদ্র্যে পতিত।
তিনি বলেন, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য মানে স্বাস্থ্য, উপযোগিতা, পরিবহন এবং চলাচলের স্বাধীনতাসহ জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয়তার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া।
তিনি বলেন, আজ যুদ্ধবিরতি হলেও বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে না। যুদ্ধের শুরু থেকে গাজার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং গাজায় ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংসের ফলে, মূল্যায়ন ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, অর্থনৈতিক মন্দা ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জিং এবং ধীর করে তুলবে।