জাতীয়

মানুষের সেবার আবারো সুযোগের জন্য নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

মোহনা অনলাইন

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনগণকে আবারো তাদের সেবা করার সুযোগ দিতে ‘নৌকায়’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেক বার সেবা করার সুযোগ দেবেন, সেই আহ্বান জানাই।’

তিনি আগামীর নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করে ওয়াদা চাইলে উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সমম্বরে সাড়া দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

সমাবেশের আগে তিনি এখানে  মোট ২৫৯৩ কোটি ব্যয়ে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যার মধ্যে সমাপ্ত ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বাকী পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। যেগুলোকে তিনি খুলনাবাসীর জন্য তাঁর উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই নৌকাই দেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ।

‘আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা তৈরী করে দিয়ে যাব,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে নির্বাচনের সময় একটা বিষয়ে সকলকে নজর রাখতে হবে-বিএনপি জানে যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল এবং তাদের নেতা নেই মুন্ডুহীন একটা দল। একজন পলাতক আসামী আর একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। সেই দল এদেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়।

তিনি বলেন, কেউ যদি এভাবে গাড়িতে আগুন আর মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়াতে চেষ্টা করে ঐ হাত সেই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। আর উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন যাতে এদেশের মানুষের কোন ক্ষতি করতে আর কেউ সাহস না পায় ।
‘আমি দেখেছি সেই পোড়া মানুষগুলোর দুরাবস্থা, চোখে পানি রাখা যায় না,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের মধ্যে মনুষত্ববোধ নেই। দেখেছি একজন পুলিশ সদস্যকে কিভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। যে গরিব মানুষ, চাকরি করতো। কিভাবে সাংবাদিকদের বেদম পিটিয়েছে। কাজেই ঐ ধরনের ঘটনা যেন আর ঘটাতে না পারে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মানুষের নিরাপত্তা দেবেন। আইনশৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থার পাশে থেকে আপনারাও মানুষের নিরাপত্তা দেবেন, সেটাই আমি আহ্বান জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আরো বক্তৃতা করেন, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।

সমাবেশে যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী খুলনা বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

জনসভাকে কেন্দ্র করে সমগ্র খুলনা মহানগরী যেন উৎসবের নগরী হয়ে ওঠে এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমনে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে দলে দলে সমাবেশে যোগ দেয়।

সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যানার, প্লাকার্ড, ফেস্টুন হাতে নানা রঙের পোশাক পরে শ্লোগানে শ্লোগানে চারদিক মুখরিত করে দলে দলে লোক সমাবেশস্থল সার্কিট হাউজ মাঠে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সমগ্র এলাকাটি এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী  বলেন, তাঁর সরকার ৮ লাখ ৪১ হাজার গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর ও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে। ১০ কোটির ওপর মানুষ সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের উপকারভোগী। ১ কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ড দিয়ে সুলভে নিত্যপণ্য ক্রয় করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে সাড়ে ৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসা সেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ দেশি-বিদেশি চক্রান্তে জনগণের ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসতে না পারলে খালেদা জিয়ার সরকার সেগুলো বন্ধ করে দেয়। কারণ, এখানে চিকিৎসা নিয়ে নাকি এরা সবাই নৌকায় ভোট দেবে। কিন্তু এখানে চিকিৎসাতো কোন দল দেখে দেওয়া হয় না, সাধারণ মানুষ সবাই চিকিৎসা পাচ্ছে। তিনি একে বিএনপি’র ‘চিন্তার দৈন্যতা’ ও ‘হীনমন্যতা’ বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই জনগণের উন্নয়ন হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি-জামায়াত জানে শুধু সন্ত্রাসি কর্মকান্ড। তাদের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা।

তিনি ২৮ অক্টোবর পিটিয়ে পুলিশ হত্যা ও ৪৫ জন পুলিশকে আহত করা, তাদের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের নির্যাতন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ, মহিলা আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা করে মহিলাদের ওপর নির্যাতন এমনকি অন্তস্বত্তা মহিলাকে বহনকারি অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করাকে ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণের ওপর ইসরাইলের আগ্রাসনের সঙ্গে তুলনা করেন।

তিনি বলেন, এদের মধ্যে এতটুকু মনুষত্যবোধ আছে বলে আমি মনে করি না। এভাবে মানুষ পোড়ানো তারা শুরু করেছিল ২০১৩ ও ১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য। যখন তারা হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়েছে। হাজার হাজার গাড়ি, রেল, লঞ্চ, ভূমি অফিস, সরকারি অফিস, স্কুল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এমনকি নির্বাচনের সময় ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছিল। নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারে নাই কারণ জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

অগ্নি সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, খুনী ও দৃস্কৃতিকারি দল যারা আগুন দিতে যাবে তাদের ধরিয়ে দিলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। যাতে এভাবে তারা মানুষকে পুড়িয়ে মারতে না পারে। আর যারা এভাবে আগুন দিয়ে মানুষ মারে তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

তাঁর করে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে লন্ডনে অবস্থানকারি এসব আগুন সন্ত্রাস আর পুড়িয়ে মানুষ হত্যার হুকুমদাতা।

তিনি প্রশ্ন রাখেন এরা কারা, এরা কি বাংলাদেশ চায়, না দেশের ধ্বংস চায়?

আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা এবং ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য আর মানুষ হত্যার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।

এদের চরিত্র কোনদিনও বদলাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক ওয়াদা করে যায়। খালেদা জিয়া এই খুলনায় নির্বাচনের আগে ওয়াদা করেছিল বন্ধ সব শিল্প কারখানা চালু করবে। কিন্তু নির্বাচিত হবার পর সব চালু শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেয়, এমনকি মোংলা বন্দর পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল।

কাদের উস্কানিতে আজকে তৈরী পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলন করছে সে প্রশ্ন রেখে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন এই তৈরী পোশাক শ্রমিকদের বেতন ৮শ টাকা থেকে ’৯৬ পরবর্তী তাঁর সরকার ১৬শ’ টাকা করে যায়। যেটাও বিএনপি সরকার বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের পর টানা তিন মেয়াদে যথাক্রমে ৩ হাজার ২শ’, ৫ হাজার ৩শ’ এবং ৮ হাজার ৩শ’ টাকা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যা বর্তমানে ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১২ হাজার ৫শ’ টাকা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এটাতো বেসরকারি খাত। তবু তাঁর সরকার গার্মেন্টস মালিকদের ধরে এটা করিয়েছে শ্রধু শ্রমিকদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে।

আন্দোলনের নামে ১৯টি কারখানা ভাংচুর করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের সঙ্গে কারা আছে সেটাই এখন দেখা দরকার।

শেখ হাসিনা কৃতজ্ঞচিত্তে বলেন, বারবার বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়েছে। সরকার গঠন করেছি। জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আর সেজন্যই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমরাতো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে চাই, উন্নত জীবন দিতে চাই, দেশের মানুষ যদি ভাল থাকে সেটাই আমার পাওয়া। কেননা এদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা আজন্ম সংগ্রাম করেছেন এবং শেষে জীবনটাই দিয়ে গেছেন, তাঁর মা-ভাই ও পরিবার পরিজনেরা জীবন দিয়েছেন।

মাত্র ১৫ দিন আগে বিদেশে যাওয়ায় ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা থেকে বেঁচে যান তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানা, পরে ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যখন একরকম জোর করে দেশে ফেরেন তখন বিমানবন্দরে তাঁর যাবার সময় বিদায় জানাতে আসাদের কেউ ছিল না, ছিল বনানী কবরস্থানে সারি সারি কবর। সে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১০ বছরের পুত্র জয় এবং ৮ বছরের কন্যা পুতুলকে স্নেহবঞ্চিত করে শুধু বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তিনি ফিরে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, এমন এক দেশে ফিরেছিলেন যেখানে জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাঁর বাবার হত্যাকারিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল। ক্ষমতায় ছিল জাতির পিতার খুনী ও ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধীরা। খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জিয়া তাদের পুরস্কৃত করেছিল। যার ধারাবাহিকতা খালেদা জিয়া ও এরশাদ বজায় রাখে।

‘যেদিন এয়ারপোর্টে পা দিয়েছি দেখেছি আমার আপনজন কেউ নেই, বাংলার মানুষকেই আমি আপনজন হিসেবে নিয়েছি। বাংলার মানুষের মাঝেই আমার হারানো বাবা, মা ও ভাইয়ের ¯েœহ যেন ফিরে পেয়েছি। আর এই বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। জনগণকেই আপন করে নিয়েছিলাম বলে তাদের কল্যাণেই আমি কাজ করে যাচ্ছি,’ বলেন তিনি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় পরিশেষে বলেন, ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিলাম আমি তাই।’

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button