বিএনপিকে নির্বাচনে আসার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচনে আসুন, কার কত দৌড় আমরা সেটা দেখি। জনগণ কাকে চায় সেটা আমরা যাচাই করে দেখি।’ যারা এখনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে, তাদেরও বলব- নির্বাচনে আসুন। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেত সকালে রাজধানীর তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মনোনয়ন বোর্ড প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা শুরু হয়। এ সময় এসব কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের শক্তি দেশের জনগণ। কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে পরিণতি ভালো হবে না।
আন্দোলনের নামে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকে প্রতিরোধ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও তাদের হরতাল-অবরোধ বন্ধ হয়নি। এর আগে যে অবরোধ দিয়েছিল, সেটাও অব্যাহত আছে। তারপর আবারও এই অবরোধ। বিএনপি মানুষ মেরে সরকারের পতন চায়। তারা আবারও মানুষ পোড়ানো শুরু করেছে। কাজেই এই হরতাল-অবরোধ ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। আসলে নির্বাচনে আসার মতো আস্থা-বিশ্বাসও তাদের নেই। আর একটা দলের মাথা কোথায়? জানি না, বিএনপি কি বাংলাদেশে একজন নেতাও পেল না, যাকে তাদের দলের চেয়ারম্যান করতে পারে! সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই আর খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় কানাডার পুলিশ এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। যারা এমন দুর্নীতিবাজ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো হামলা ঘটাতে পারে– তাদের নেতৃত্বে যে দল; কোন বিশ্বাসে তারা নির্বাচনে আসবে!
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাটি ও মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা, যে দরদ সেটা আমাদের থেকে বেশি কারও থাকতে পারে না। আমার মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি। আমরা ভোট ও ভাতের আন্দোলন করেছি, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর উত্তরবঙ্গে কেউ আর মঙ্গা দেখেনি।’
বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় চায়, দেশে গণতন্ত্র থাক; রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করুক। আমরা যখন সরকারে এসেছি, আজ পর্যন্ত আমরা তাদের ওপর আক্রমণ করিনি! তারা অফিসে গেছে, দল পরিচালনা করছে। যেভাবে মিটিং-মিছিল করার কথা, তারা করে যাচ্ছে। কই, আমরা তো বাধা দিই না! তাহলে এই অগ্নিসন্ত্রাস আবার শুরু কেন?
তিনি বলেন, যখন বিএনপি মিছিল-মিটিং ও ভদ্রভাবে রাজনীতি করছিল, তখন তাদের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসছিল। জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও আস্তে আস্তে বাড়ছিল। অনেক টাকা-পয়সা খরচ করছিল। কিন্তু এটা ঠিক, জমায়েতও ভালো করছিল। কিন্তু যেই আবার অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, পুলিশ ও মানুষ পিটিয়ে মেরেছে, মানুষের গায়ে ও বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়েছে এবং বিচারপতির বাড়ি, বিচারক ও সাংবাদিক-পুলিশ-আনসার-সাধারণ মানুষের ওপর হামলা আর পোড়াও-জ্বালাও শুরু করেছে– সেই আবারও তারা আগের জায়গায় ফিরে গেছে। জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জনগণের কাছে পরিচয় পেয়েছে।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, যাকে খুশি তাকে ভোট দেন, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমি দাবি করব- আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিন। এটা কিন্তু সম্পূর্ণ জনগণ ও ভোটারের ইচ্ছা- তারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারেন। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’- এটাই আমাদের স্লোগান। তারপরও আমি নৌকায় ভোট চেয়ে রাখলাম। কারণ এটা আমাকে চাইতেই হবে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বদরবারে তাদের মাথা উঁচু করে চলতে পারে। সেই সম্মান তারা পেয়েছে। আর এই সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। কাজেই ওই সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদ, এদের ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর তাঁর সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। এ সময় মনোনয়ন বোর্ড সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, রাশিদুল আলম, রমেশ চন্দ্র সেন ও ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বৈঠকে যোগ দেন।