তারিক আনাম খান। মঞ্চ থেকে সিনেমা, অভিনয় থেকে নির্দেশনা, বর্ণিল এক কিংবদন্তি ক্যারিয়ার। এখনও কাজ করছেন সমান তালে, পাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, নিয়মিত গড়ছেন অভিনেতা-নেত্রী। সেই মানুষটি যখন মুখফুটে কাউকে কোনও কথা বলেন, তখন সেটার গুরুত্ব বহন করে অনেক।
দেশের স্বনামধন্য নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী। পরিচালনার পাশাপাশি এবার নাম লিখিয়েছেন অভিনেতা হিসেবেও। তবে এ নতুন পরিচয়ের জন্য ফারুকীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশের আরেক জনপ্রিয় কিংবদন্তি তারকা তারিক আনাম খান। বিশেষ করে তার প্রথম অভিনয় দেখে মুগ্ধ–বিস্মিত দর্শক–সমালোচক। তেমন প্রতিক্রিয়াই মিলছে ৩০ নভেম্বর থেকে চরকি অ্যাপে ‘সামথিং লাইক এন অটোবায়োগ্রাফি’ মুক্তির সূত্র ধরে।
সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে ফারুকীকে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন তারিক। ওই পোস্ট দেখে জানা যায়, চরকিতে মুক্তি পাওয়া ফারুকী অভিনীত ‘সামথিং লাইক এন অটোবায়োগ্রাফি‘ দেখেছেন তিনি। এরপরই তারিক জানান, ভালো অভিনয় করলেও ফারুকী চিন্তায়, মননে, বুদ্ধিমত্তায় একজন সৃজনশীল নির্মাতা। অভিনয় করতে গিয়ে যেন একজন সফল ও গুণী নির্মাতা হারিয়ে না যায়, সে হুঁশিয়ারি দিয়ে তারিক বলেন, পর্দায় মুখ দেখানো এক ধরনের মোহ! আর সে মোহ যেন নির্মাতা ফারুকীকে পেয়ে না বসে!
এই অভিনেতা যে শুধু ফারুকীকে হুঁশিয়ারি করলেন তা নয় দিয়েছেন প্রচুর উৎসাহ, প্রকাশ করেছেন মুগ্ধতাও। ছবিটি দেখে তারিখ আনাম খান নিজের একটি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিকালে। যেখানে তিনি নির্মোহভাবেই লিখেছেন, ‘‘ছবিটি দেখতে বসেছিলাম অনেকটাই নিঃস্পৃহতা আর নির্লিপ্ততা নিয়ে। কয়েকদিন ধরে আলোচনা, গল্পের শিরোনাম- এসব দেখেই মনে হচ্ছিল ওদের প্রেম কাহিনিটা দেখি।
অস্বীকার করবো না, শুরুতে আগ্রহে কিছুটা ভাটার টানও লেগেছিল। বন্দুকের আওয়াজ (বাজি পটকা হলেও আমার কাছে তাই মনে হচ্ছিল) আমাকে নাড়িয়ে দিলো। পর্দার ফারহানের (ফারুকী) মতো আমারও মনে হচ্ছিল চিৎকার করে হাতে লাঠি নিয়ে বলি ‘বন্ধ কর অসভ্যতা’। প্রেমের গল্পটাকে এক আওয়াজে ফারুকী নিয়ে গেল অন্য জায়গায়! সমাজ, মানুষ, ক্ষমতা, অন্যায়, অক্ষমতা, প্রতিবাদ আর নীরবতা সব আছে কাজটিতে। কান্না পায়, আর বিদ্রোহ করতে ইচ্ছে করে।’’
অভিনেতা দারুণ প্রশংসা করলেন নুসরাত ইমরোজ তিশার অভিনয়ের। বললেন, ‘তিশাকে অনেক আগে থেকেই চিনি জানি। অনেক কাজ করেছি, করিয়েছি। বরাবর ও একজন সিরিয়াস, নিষ্ঠাবান আর পরিশ্রমী শিল্পী। তিশা নিঃসন্দেহে এখন অনেক পরিণত। ছোট ছোট মূহুর্ত তৈরিতে অনবদ্য।’
এরপরই মূলত খান সাহেব আলাপে নিয়ে আসেন নির্মাতা ও অভিনেতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে। বলেন, ‘ফারুকীর সাথেও কাজ হয়েছে আমার। কিন্তু এরূপে ওকে ভাবিনি, দেখিওনি। প্রথমে স্বাচ্ছন্দ্য, বন্দুকের আওয়াজের পর থেকে তার চোখে ও শরীরে বিদ্রোহ, বেদনা, আপোষ, ভালবাসা মিলে একাকার হয়ে যায়। তবে অভিনেতা হয়ো না, কারণ নির্মাতা হিসেবে তুমি এখন চিন্তায়, মননে, বুদ্ধিমত্তায় অনেক অনেক পরিণত। অনেক শুভ কামনা। পুরো দলকে অভিনন্দন ও ভালবাসা। এগিয়ে যাও।’
শেষে ফুটনোটে বললেন তারিক আনাম খান, ‘বলা বাহুল্য এটি কোনও রিভিউ নয়, একেবারেই ব্যক্তিগত অনুভূতি।’ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা দম্পতির ব্যক্তিজীবনের ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র গল্প। এতে বাস্তবতা ও ফিকশনের মধ্যকার চৌহদ্দিতে রাষ্ট্র ও সমাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন কিছু ঘটনার অনুরণন রয়েছে।